প্রামাণ্যচিত্রে আবারও উঠে এলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়নের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা গতকাল রোববার এই ভিডিও প্রকাশ করেছে। গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুটি মামলার পরপরই এ ভিডিও জনসমক্ষে এলো।
মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও চলছে শুনানির প্রস্তুতি। এ অবস্থায় আলজাজিরার নতুন প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কিছু চিত্র।
দশকের পর দশক ধরে চলে আসা এই নিপীড়নের চিত্র বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে পরিষ্কার হয় ২০১৭ সালে, যখন থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামে। দীর্ঘ এই সময় ধরে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়নে মিয়ানমার সরকার আলাদা বাহিনী গঠন করে।
বার্মিজ শিক্ষাবিদ ড. মাউন জার্নি বলেন, ‘১৯৬৬ সালের শুরুর দিক থেকেই বার্মিজ সেনারা রোহিঙ্গাদের সমস্যা হিসেবে দেখা শুরু করে। নাসাকা বাহিনীর মাধ্যমেই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উৎখাতের কাজ সম্পাদন করে আসছে।’
তবে মিয়ানমারের সাবেক নিরাপত্তা প্রধান জেনারেল খিন ইয়ন্ত বলছেন, অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ ঠেকাতে নাসাকা বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। তিনিও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি মনে করেন।
জেনারেল খিন ইয়ন্ত বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলেই রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখানে স্থায়ী হয়। তারা হয়তো বাংলাদেশ থেকে এসেছিল। আমরা যখন নাসাকা গঠন করি, তার মূল কারণ ছিল সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানো। আর সে সময় বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি মুসলমান রাখাইনে অনুপ্রবেশ করতে চাইত। সেনারা ধর্ষণ করছে, এসব খবরও গণমাধ্যমের মিথ্যাচার।’
কিন্তু মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গরা বলছেন ভিন্ন কথা। আবদুজব্বার নামের এক রোহিঙ্গা মুসলিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে আসিনি। (নিজের বাড়ি দেখিয়ে) এটাই আমাদের জন্মস্থান।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘বার্মিজ আর্মি আমাদের প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করত। আলাদা ঘরে নারীদের আটকে রেখে অমানুষিক যৌন নির্যাতন চালাত তারা।’
সময় অনেক গড়ালেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহতভাবে চালিয়ে আসছে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মতো নৃশংসতা। যাকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।