‘বাবা বলছো?’ : সাত বছর পর অপহৃত মেয়ের ফোন
স্কুলছাত্রী, তরুণীসহ ২৭৬ নারীকে ২০১৪ সালে নাইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশের চিবোক অঞ্চল থেকে অপহরণ করেছিল দেশটির জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের সদস্যেরা। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন পালিয়ে ফিরতে পেরেছে। এ ছাড়া সরকারের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ছাড়া পেয়েছে অনেকে। তবে এখনও নিখোঁজ শতাধিক নারী ও শিশু। অপহৃত হওয়ার প্রায় সাত বছর পর সম্প্রতি পালাতে সক্ষম হয়েছে আরো কয়েকজন স্কুলছাত্রী। তেমনই এক শিক্ষার্থীর বাবার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
হালিমা আলি মাইয়াঙ্গা নামের এক কিশোরী গত বৃহস্পতিবার তার বাবাকে ফোন দিয়ে জানায়, বোকো হারাম জঙ্গিদের কবল থেকে পালাতে পেরেছে তারা কয়েকজন।
হালিমার বাবা আলি মাইয়াঙ্গা বলেন, “ফোনের ওই প্রান্ত থেকে মেয়ে বারবার বলছিল, ‘বাবা, তুমি বলছ? বাবা বলছ?’ বলেই মেয়ে আমার কান্নায় ভেঙে পড়ল। অনেক কাঁদছিল মেয়েটা, তাই ওর কথা ভালোভাবে শুনতে পারছিলাম না। আমি নিজেও কাঁদছিলাম। আশাই করিনি মেয়ের কণ্ঠ আবার শুনতে পাব।”
মেয়ে ফিরে আসায় পরিবারের সবাই খুব খুশি বলে জানালেন আলি মাইয়াঙ্গা। বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে এখন অনেক মানুষ, সবাই আমাদের আনন্দে যোগ দিয়েছে।’
আলি মাইয়াঙ্গা জানান, ফোনে খুব অল্প সময় মেয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। আর, হালিমাও আবেগে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না। তবে তাঁর মেয়েসহ অন্যরা সবাই নিরাপদে এবং নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছে বলে জানিয়েছেন আলি মাইয়াঙ্গা। আরো বললেন, সেনাবাহিনীর একটি ফোন লাইন থেকে তাঁকে কল করেছিল হালিমা।
হালিমার বাবার দেওয়া এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে নাইজেরিয়ার সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন। হালিমাসহ মোট কতজন পালাতে পেরেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
হালিমার সৎবোন মরিয়ম আলি মাইয়াঙ্গাকেও অপহরণ করেছিল বোকো হারাম জঙ্গিরা। এরপর ২০১৬ সালে বোকো হারামের এক কমান্ডারের ঔরসে জন্ম নেওয়া এক সন্তানসহ মরিয়মকে উদ্ধার করে নাইজেরীয় সেনারা। বোকো হারামের কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া, ছাড়া পাওয়া কিংবা পালিয়ে আসা নারীদের দেখভাল করার জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন থেরাপিস্ট সোমিয়ারি ফুবারা। তিনিই এসব তথ্য জানান।
নাইজেরিয়ার অ্যাডামাওয়া প্রদেশের ইয়োলায় আমেরিকান ইউনির্ভাসিটি অব নাইজেরিয়াতে মরিয়মসহ অপহৃত নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন ফুবারা। ওই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মরিয়ম ও হালিমা পরস্পরের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। মরিয়ম প্রায়ই বোনের কথা মনে করে কাঁদত।’
বোকো হারাম জঙ্গিরা ২০১৪ সালে বোর্নো প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় চিবোক গ্রামের একটি আবাসিক স্কুলে হামলা চালিয়ে ২৭৬ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছিল। ওই ঘটনা সে সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে ‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস’ হ্যাশট্যাগে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল।
অপহৃত হওয়ার প্রায় পর পরই অনেক মেয়ে বোকো হারামের কব্জা থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের মে মাসে একটি মেয়েকে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাইতে দেখা গিয়েছিল বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছিলেন।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে নাইজেরিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পর ২১ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিয়েছিল বোকো হারাম। এরপর ২০১৭ সালে সরকারের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় আরো ৮২ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেয় জঙ্গি সংগঠনটি। সেই তখন থেকে সম্প্রতি হালিমাদের পালানোর খবরের আগ পর্যন্ত বন্দি থাকা বাকী ১১২ জন কিশোরী-তরুণীর কোনো হদিশ মেলেনি।