বিক্ষোভ ঠেকাতে মিয়ানমারে এবার ইন্টারনেট বন্ধ
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভের পর দেশজুড়ে প্রায় সব ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক শাসকেরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারে গত সোমবারের সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রথমে গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্লক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার ব্লক করা হয় টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম। সাইটগুলো ব্লক করার পরও অনেকে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কসের (ভিপিএন) মাধ্যমে সেগুলোতে ঢুকছিলেন। এবার দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হলো।
ইন্টারনেট বন্ধের পর মিয়ানমারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘নেটব্লকস ইন্টারনেট অবজারভেটরি’।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ইন্টারনেট বন্ধের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সেবা চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে সামরিক বাহিনী এ নিয়ে কিছু বলেনি।
গতকাল শনিবার ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভে ‘সেনা স্বৈরশাসক, ব্যর্থ, ব্যর্থ’ এবং ‘গণতন্ত্র, বিজয়ী, বিজয়ী’ স্লোগান দেওয়া হয়। শহরের মূল সড়কগুলোতে বেরিকেড দিয়ে রেখেছিল পুলিশ। এদিন ছাত্র-শিক্ষক ও কারখানা শ্রমিকদের অনেকে গতকাল রাস্তায় নেমে সেনাবাহিনীর হাতে আটক অং সান সু চিসহ সব নির্বাচিত নেতাদের মুক্তি দাবি করে।
গত শুক্রবার ইয়াঙ্গুন, কাচিন ও সিতওয়েসহ বেশ কয়েকটি শহরে শিক্ষকেরা সামরিক শাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন। এর আগে গত বুধবার কর্মবিরতি পালন করেন দেশের ৩০টি শহরের প্রায় ৭০টি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তা ছাড়া মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ও থালাবাসন পিটিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন খবর এসেছে।
এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত সোমবার দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে বন্দি করার পর ক্ষমতা দখল করে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে দেশটির পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সু চিকে আটকে রাখার জন্য বলা হয়েছে। রাজধানী নেপিদোর একটি থানা থেকে প্রাপ্ত নথিতে বলা হয়েছে, সু চির বাসভবন অনুসন্ধান করে সামরিক কর্মকর্তারা কয়েকটি রেডিও খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো অবৈধভাবে আমদানি করে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুলিশের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনলাইন সরব হয়ে ওঠেন অনেকে। এ ছাড়া দেশটির সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সোচ্চার অবস্থান ক্রমেই আরো জোরদার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটের ওপর খড়গহস্ত হচ্ছে মিয়ানমার জান্তা।