বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স মার্কিনিদের হাতে দিতে চায় না ইরান
ইরানের রাজধানী তেহরানে ১৮০ আরোহীসহ বিধ্বস্ত ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিমান থেকে উদ্ধার করা ব্ল্যাকবক্স বিমানটির নির্মাণ সংস্থা বোয়িং কর্তৃপক্ষ বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে না বলে জানিয়েছে ইরানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। আর এতেই বিভিন্ন মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
বৈশ্বিক বিমান বিধিমালা অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় তদন্ত পরিচালনার অধিকার রয়েছে ইরানের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুটিকয়েক দেশেরই ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা রয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের সিভিল এভিয়েশন সংস্থার প্রধান আলি আবেদজাদেহ বলেছেন, ‘আমরা নির্মাতা ও মার্কিনিদের কাছে ব্ল্যাকবক্স হস্তান্তর করব না। তবে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি যে, কোন দেশ ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণ করবে।’ তিনি আরো জানান, ইরান এভিয়েশন সংস্থা এ দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। এ ক্ষেত্রে চাইলে ইউক্রেনও অংশ নিতে পারবে।
গতকাল বুধবার ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ সিরিজের যাত্রীবাহী বিমানটি উড্ডয়নের আট মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটির সব যাত্রীই নিহত হন। ইরাকের দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়েছিল, কারিগরি ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাদিম প্রাইসটাইকো জানিয়েছেন, ওই বিমানটিতে ৮২ ইরানি, ৬৩ কানাডিয়ান ও ১১ ইউক্রেনীয়, ১০ সুইডিশ, চারজন আফগান, তিনজন জার্মান ও তিনজন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন।
এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে আমাদের সরকার নিবিড়ভাবে এ বিষয়ে (বিমান বিধ্বস্ত) পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করবে।’
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভলোদিমির জেলেন্সকি বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সঠিক কারণ ও দায়ীদের তুলে ধরাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।’ ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তারা।
এদিকে, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পশ্চিম ইরাকের আল-আনবার প্রদেশের আল-আসাদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে এবং পরে মধ্য ইরাকের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা ইরবিলের মার্কিন বিমানঘাঁটিতে এক ডজনের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানায়, বাগদাদে মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে দুটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার সত্যতা স্বীকার করলেও এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনী দাবি করে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হন। সোলেইমানি হত্যার ঘটনায় ইরান চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।