বিমান ভূপাতিতের বিষয়ে সরকারের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে তেহরানে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ
ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত হওয়া নিয়ে ইরান সরকারের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে দেশটির রাজধানী তেহরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তেহরানের অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। সিরাজ বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আমির কবির বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রথমে শিক্ষার্থীরা নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে জড়ো হন। পরে সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থীরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে তেহরানের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘অনুপ্রেরণাদায়ক।’
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারস নিউজ এ নিয়ে খবর প্রকাশ করে। ফারস জানায়, হাজারখানেক বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব বিক্ষোভে মার্কিন হামলায় নিহত জেনারেল কাসেম সোলেইমানির ছবি ছেঁড়া হয় বলে খবরে জানায় সংবাদ সংস্থাটি।
পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর সন্দেহ ও নেতাদের দাবির মুখে গতকাল শনিবার ইরান স্বীকার করে নেয় যে ইউক্রেনের বিমানটি ‘অনিচ্ছাকৃত ভুলে’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত করা হয়েছিল। অথচ ঘটনার পর থেকে ইরানি রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, এটি নিছকই দুর্ঘটনা। ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনীয় বিমানটি ভূপাতিতের অভিযোগ আনছে।
কিন্তু গতকাল স্বীকার করে নেওয়ার পর ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ‘ক্ষমার অযোগ্য ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ দিনটিকে দুঃখের দিন হিসেবে আখ্যা দেন। এ সংক্রান্ত টুইটে জারিফ লেখেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় স্বভাবের জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের স্থানীয় সময় শনিবার সকালের খবরে বিবৃতিটি প্রচারিত হয়। এতে আরো বলা হয়, মানব নিয়ন্ত্রিত অনিচ্ছকৃত ভুলের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। এতে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। দুর্ঘটনার পর থেকেই এর জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছিল কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পরই মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে, এ দুর্ঘটনার জন্য ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রকে দায়ী করা হয়, যা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে তেহরান।
তবে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমের পক্ষ থেকে নানা তথ্য-প্রমাণ হাজির করায় অবশেষে এ নিয়ে বিবৃতি প্রচারিত হয়। গত বুধবার ইরাকের দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই তেহরান থেকে কিয়েভগামী ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ‘পিএস-৭৫২’ উড্ডয়নের পরই বিধ্বস্ত হয়।
যাত্রীবাহী বিমানটিতে ১৭৬ আরোহী ছিলেন, যাঁদের সবাই মারা যান। এদের প্রায় ৬০ জন কানাডার নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া এতে ইরান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান ও জার্মানির নাগরিকরা ছিলেন।
গত বুধবার তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর ইউক্রেনের যাত্রীভর্তি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এর কিছু সময় আগে ইরাকে দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে উপর্যুপরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। আর জেনারেল সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান।