ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় চুক্তিতে ২৩ দেশের সম্মতি
কোভিড-১৯-এর মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় চুক্তি চান বিশ্বনেতারা, যাতে সব দেশ আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে ২৩টি দেশের নেতারা গতকাল মঙ্গলবার একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
করোনাজনিত মহামারির জন্য প্রস্তুত ছিল না বিশ্ব। তাই করোনা যখন দ্রুত ছড়াতে শুরু করল, তখন সব দেশকেই কমেবেশি দিশেহারা লেগেছে। সরকারের যেমন প্রস্তুতি ছিল না, মানুষের ভাবতেও পারেনি এমন পরিস্থিতি আসতে পারে। ফলে, প্রায় প্রতিটি দেশ মহামারি সামলাতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইছেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২৩টি দেশের নেতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চাইছে, এই প্রস্তুতির জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তি হোক। বিশ্বের প্রধান সংবাদপত্রগুলোতে এদিন একটি উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধানেরা সই করেছেন। সেখানেই এই চুক্তির কথা বলা হয়েছে।
উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, মহামারি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে এবং তা মোকাবিলা করতে একটি নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্য দেশগুলোর কাজ করা উচিত। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে যদি মহামারি নিয়ে প্রস্তুতি থাকে, তাহলে তা অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
এ ধরনের চুক্তির ধারণা প্রথমে দেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। তিনি গত নভেম্বরে জি২০ বৈঠকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেখানে মহামারিতে টিকা, ওষুধ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সর্বজনীন ও সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন তিনি।
নভেল করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে যে, মহামারির মোকাবিলা করতে গেলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই জরুরি। করোনার তোপে বিশ্বের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। করোনা মোকাবিলায় নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। তাই, আন্তর্জাতিক চুক্তি দরকার বলে মনে করছেন অনেক বিশ্বনেতাই। চুক্তি হলে টিকা, ওষুধ এবং রোগ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো সহযোগিতা করবে। সবাই সমান সুযোগ পাবে।
উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে মহামারি বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতি আসবে, সেই বিপদকে কোনো একক সরকার বা কয়েকটি সংস্থা মিলে মোকাবিলা করতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও জাপানের রাষ্ট্রনেতাদের সই এই নিবন্ধে নেই।
আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তি তখনই সফল হতে পারে, যখন তা বাস্তবায়নের পথে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ না আসে।
করোনার মহামারির সময় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও নেতারা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ধনী দেশগুলো বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনে নিয়েছে। ফলে গরিব দেশগুলো ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা নিয়ে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।
তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধানেরা সই করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ আমাদের দুর্বলতা ও বিভাজনের সুবিধা পেয়েছে। আমরা এই মহামারি রুখতে এক হয়ে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা করতে পারিনি।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তাবিত চুক্তিতে সম্মতি দেন ২৩ দেশের নেতারা। দেশগুলো হলো- জার্মানি,, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, নরওয়ে, গ্রিস, ফিজি, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চিলি, কোস্টারিকা, আলবেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তিউনিসিয়া, সেনেগাল, সার্বিয়া ও ইউক্রেন।
চুক্তি-সংক্রান্ত চিঠিতে এখনও স্বাক্ষর করেনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তবে, দেশ দুটির নেতারা চুক্তিবিষয়ক প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস।