ভারতজুড়ে বিক্ষোভ আরো ছড়িয়ে পড়ছে, উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিনে আরো উত্তাপ ছড়িয়েছে। নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের পর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। গত রোববার এ ঘটনার পরই ভারতজুড়ে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে রেললাইন অবরোধ ও ট্রেনে আগুন দেওয়ায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুমকি দিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে এ আইন প্রয়োগ করতে হলে তাঁর মৃতদেহের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। এদিকে এসব ঘটনায় শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁরা বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ওই অভিযান চালানো হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ নিজেরাই বাসে আগুন ধরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। পুলিশি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। রোববার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই সহিংসতা চলে রাতভর। গতকাল সোমবার সকালেও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, মুসলিম না হলেও এই বিতর্কিত আইনের প্রতিবাদ করবেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি তো মুসলিম নই। তবুও আমি প্রথম দিন থেকে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রথম সারিতে রয়েছি। আমি মনে করি, আমরা যদি সত্যের পাশে দাঁড়াতেই না পারি, তবে আমাদের পড়াশোনা কী কাজে আসবে?’
এর পর গতকাল সোমবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয় উত্তর প্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক হলগুলো খালি করে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে।
প্রতিবাদ হয়েছে অরুণাচল প্রদেশেও। শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবি জানান। মাদ্রাজ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ করে নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার নিন্দা জানান এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবি জানান। এ ছাড়া সোমবার লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
এ ছাড়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। সংহতি জানিয়ে মিছিল করেছেন মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জামিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অনেক শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্য গণপরিবহন ব্যবস্থা। সোমবার বিক্ষোভকারীরা ট্রেনে আগুন ও রেললাইন অবরোধ করলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টিকেট কাউন্টার থেকে শুরু করে একাধিক স্টেশনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
এদিকে কলকাতায় লাখো মানুষের বিক্ষোভে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাঁর মৃতদেহের ওপর দিয়ে এই আইন প্রয়োগ করতে হবে।
এ ছাড়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বিজেপি সরকার। শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করেছে তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। সংবিধান রক্ষায় আমরা লড়াই করে যাব।’
অন্যদিকে, চলমান বিক্ষোভকে হিংসাত্মক ও দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।