মহাকাশে ‘মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব’ নিশ্চিতে ‘স্পেস ফোর্স’ প্রতিষ্ঠা

Looks like you've blocked notifications!

মহাশূন্যের জন্য বিশেষায়িত একটি যোদ্ধাবাহিনীর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেন্টাগনের অর্থায়নে পরিচালিত হবে এই মহাকাশ বাহিনী।

‘স্পেস ফোর্স’ বা ‘মহাকাশ বাহিনী’ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গত ৭০ বছরের মধ্যে নতুন কোনো সামরিক বাহিনী। এই নয়া বাহিনী মার্কিন বিমানবাহিনীর আওতাধীন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী এক সামরিক ঘাঁটিতে এই বাহিনীর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে ট্রাম্প মহাকাশকে ‘বিশ্বের নবতম যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে পড়েছে, সে সময় মহাকাশে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ 

ট্রাম্প আরো বলেন, ‘আমরা (বিশ্বের) নেতৃত্ব দিচ্ছি, তবে (অন্যদের চেয়ে) যথেষ্ট এগিয়ে নেই, কিন্তু খুব শিগগিরই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব।’

‘স্পেস ফোর্স মহাশূন্যে আমাদের আগ্রাসন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে’ যোগ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য ৭৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট অনুমোদন করেন।

প্রথম বছর স্পেস ফোর্সের জন্য চার কোটি মার্কিন ডলার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

গত আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন বাহিনীর নাম জানিয়েছিলেন, যারা মহাকাশে যুদ্ধের বিষয়টি তদারক করবে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর মহাকাশ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন ওই বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইউএস স্পেস কমান্ড’ বা ‘স্পেসকম’।

চীন ও রাশিয়া নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রধানদের কাছ থেকে— এমন তথ্য পাওয়ার পর এ পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সে সময় বলা হয়েছিল, যোগাযোগ ও নজরদারির জন্য ব্যবহৃত শতাধিক মার্কিন স্যাটেলাইটের কার্যক্রম দেখভাল করাসহ মহাকাশে মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তদারকি করাই হবে নতুন এই বাহিনীর মূল কাজ।

গত আগস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘মহাকাশে আমেরিকার কর্তৃত্ব যেন কখনো হুমকির মুখে না পড়ে, তা নিশ্চিত করবে স্পেসকম।’

কেন মহাকাশ বাহিনী গঠন করেছেন ট্রাম্প?

মহাকাশে যুদ্ধ নিয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সিরিজ ‘স্টার ওয়ার্স’। এই চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভালো ও মন্দের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে মহাকাশে লড়াই। মহাকাশে বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা এবং ‘স্টার ওয়ার্স’ স্টাইলে অস্ত্রবাজি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে ট্রাম্পের নতুন বাহিনীর কাজ। আর তাই মহাকাশে যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই একটি মার্কিন বিমান বাহিনীর অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও ‘স্পেসকম’ গঠন করে ট্রাম্প প্রশাসন।

এ ছাড়া চীন দাবি করছে, তাদের কাছে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে মহাকাশভিত্তিক লেজার অস্ত্র তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

‘স্পেসকম’-এর নেতৃত্বভার দেওয়া হয়েছিল এয়ারফোর্স জেনারেল জন রেমন্ডকে। রেমন্ড জানিয়েছিলেন, মহাকাশে সামরিক সক্ষমতা আরো বাড়াতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রেমন্ড বলেন, ‘মহাকাশ একটি যুদ্ধ-লড়াইয়ের ক্ষেত্র। আমি মনে করি, আমাদের জীবনযাপন ও রণপন্থা নির্ভর করছে মহাকাশে আমাদের কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তার ওপর।’ 

এবার রেমন্ডকেই ‘স্পেস ফোর্স’ বাহিনীর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন এয়ার ফোর্স সেক্রেটারি বারবারা বারেট জানান, স্পেস ফোর্সে থাকবে বিমান বাহিনী ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার সদস্য।

অবশ্য স্পেসকমকে একেবারে আনকোরা বাহিনী বলা যাবে না। এর আগে ১৯৮৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কাজ করেছে স্পেসকম। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর (নাইন-ইলেভেন) যুক্তরাষ্ট্রে টু‌ইট টাওয়ারে হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমে বিশেষ নজর দিতে হয় মার্কিন সামরিক বাহিনীকে। তাই তখন বন্ধ হয়ে যায় স্পেসকমের কার্যক্রম।

মহাকাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক কার্যক্রমের খতিয়ান রাখে সিকিউর ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, এ তিনটি দেশের কাছেই স্যাটেলাইট বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে।

মহাশূন্যে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বৃদ্ধিকে রাশিয়ার জন্য হুমকি বিবেচনা করে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি মাসের শুরুর দিকে।