ঘূর্ণিঝড় মোখা

মিয়ানমারের উপকূল থেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে লাখো মানুষ

Looks like you've blocked notifications!
মিয়ানমারের আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি : ইরাবতী

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। আগামীকাল সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যেকোনো সময়ে এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। এই ভয়ে মিয়ানমার উপকূল থেকে সেদেশের লাখো মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। আজ শনিবার (১৩ মে) এক প্রতিবেদনে দেশটির গণমাধ্যম ইরাবতী এই তথ্য জানিয়েছে।

ইরাবতী জনিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার সিটওয়ে, কিয়াকপিউ, মংডু, রাথেডাউং, মাইবোন, পাকতাও এবং মুনাং শহরগুলোর জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।

আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, গত বুধবার থেকে তারা প্রায় এক লাখ দুই হাজার রাখাইন বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছেন। একইসঙ্গে এসব রাখাইনকে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ করছে। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ঝড়ের পরে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই প্রক্রিয়ায় সহায়তাকারী লেখক ওয়াই হিন অংয়ের মতে, এক লাখের বেশি জনসংখ্যার শহর সিটওয়। এই শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাসিন্দা তাদের বাড়ি ছেড়েছেন। সিটওয়েও তার আশপাশের গ্রাম থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার বাসিন্দা শহরে আর গেটে পাহাড়ের মঠে আশ্রয় নিয়েছে।

ওয়াই হিন অং গণমাধ্যম ইরাবতীকে বলেন, ‘খাদ্য, ওষুধ ও টয়লেটের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ 

এদিকে, কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা আজ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, মোখার আঘাত হানার আগেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার। 

প্রতিবেদনে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সিত্তওয়েতে আঘাত হানবে অতিপ্রবল মোখা। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, ভূমিধ্বস ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারীর কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ) গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের আপডেটে জানিয়ে বলে, ‘এই বর্ষা মৌসুমে এটিই মিয়ানমারের জন্য প্রথম ঘূর্ণিঝড়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি ঝুঁকিপূর্ণ ও বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে, যা নিয়ে আমরা উদ্বেগে রয়েছি।’

ওই আপডেট বার্তায় ইউএনওসিএইচএ বলে, রাখাইনের আশ্রয় শিবিরগুলোতে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি বাস্তচ্যুত লোক রয়েছে। এসব শিবিরগুলো উপকূলীয় এলাকার নিচু স্থানে অবস্থিত।’

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রাখাইনে আঘাত হানবে জানিয়ে ইউএনওসিএইচএ জানায়, মিয়ানমারের রাজ্যটিতে ৬০ লাখ প্রাকৃতিক দুর্যোগটির হুমকিতে রয়েছে। রাজ্যটিতে ব্যাপক সহায়তার প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য চিন, মাগওয়ে ও সাগাইংয়ে বাসিন্দাদের আগে থেকেই সাহায্যের প্রয়োজন বলে আপডেট বার্তায় জানানো হয়েছে।

মোখা মোকাবিলায় সিত্তওয়েতে একটি দল মোতায়েনের কথা জানিয়েছে ইউএনওসিএইচএ। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রস জানিয়েছে, আমরা মিয়ানমারের রেড ক্রসের সঙ্গে কাজ করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তাসহ উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এদিকে, মোখা মোকাবিলায় রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট।