মিয়ানমারে জান্তার ভয়ে সন্তানকে অস্বীকার করতে হচ্ছে অভিভাবকদের

Looks like you've blocked notifications!
মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের ছবি। ছবি : রয়টার্স

মিয়ানমারে তিন মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাতটি পরিবার রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদপত্রে ক্ষমতাসীন জান্তাবিরোধী ছেলে, মেয়ে, ভাগ্নি বা ভাতিজি, ভাতিজা বা ভাগ্নে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নোটিশ প্রকাশ করছে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এক বছর আগে ক্ষমতা কেড়ে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। গত বছরের নভেম্বরে জান্তাবাহিনী ঘোষণা দেয়—তারা সেনাবিরোধীদের সম্পত্তি দখল করবে এবং বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেওয়া লোকজনদের গ্রেপ্তার করবে। অনেক বাড়িতে অভিযানও চালানো হয়। সেনাবাহিনীর এমন ঘোষণার পর থেকে সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের নোটিশের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে।  

সাবেক গাড়ি বিক্রয়কর্মী লিন লিন বো বো সামরিক শাসন বিরোধী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে নোটিশ প্রকাশ করে লিনের মা-বাবা তাঁকে সন্তান হিসেবে অস্বীকার করেছেন। এ ধরনের ৫৭০টি নোটিশ খতিয়ে দেখেছে রয়টার্স।

গত নভেম্বরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র দ্য মিরর-এ লিনের মা-বাবার দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে, আমরা লিন লিন বো বোকে ত্যাজ্য করেছি, কারণ সে কখনও তার মা-বাবার ইচ্ছার কথা শোনেনি।’

থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী একটি শহরে থাকা ২৬ বছর বয়সি লিন লিন বো বো রয়টার্সকে জানান, সেনাবাহিনীর লোকেরা তাঁর খোঁজে তাঁদের বাড়ি গিয়েছিল। মায়ের কাছ থেকে লিন এ কথা জানতে পারেন। তাঁর মা তাঁকে জানান ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন তিনি। এর কিছুদিন পরে লিন পত্রিকায় নোটিশ দেখতে পান। সে নোটিশ দেখে তিনি অনেক কেঁদেছেন বলে জানান।

রয়টার্সকে লিন বলেন, ‘আমার কমরেডরা আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলেছে—পরিবারের জন্য চাপের মুখে এমন কাজ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি মানতে পারছিলাম না, আমার মনটা ভেঙে গিয়েছিল।’

রয়টার্সের পক্ষ থেকে লিনের মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কিছু বলতে রাজি হননি।

২০০৭ সালে সৃষ্ট অশান্ত পরিস্থিতির সময়ে এবং এর আগে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে জান্তাবিরোধী সক্রিয় কর্মীদের পরিবারকে নিশানা করার কৌশল ব্যবহার করত। কিন্তু, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে কৌশলটি অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে’র সিনিয়র অ্যাডভোকেসি অফিসার ওয়াই হ্নিন পিউন্ট থন। মানবাধিকার সংস্থাটি সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ মিয়ানমারের পুরানো নাম ব্যবহার করে।

ওয়াই হ্নিন পিউন্ট থন জানান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করার বিষয়টি মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে, বর্তমানে এ ধরনের নোটিশ অতীতের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানান পিউন্ট থন।

ওয়াই হ্নিন পিউন্ট থন বলেন, ‘(জান্তাবিরোধী কর্মীদের) পারিবারের সদস্যেরা কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত হতে ভয় পায়। তারা গ্রেপ্তার হতে চায় না, কোনো সমস্যায় পড়তে চায় না।’

রয়টার্স এ বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।

এর  আগে গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের নোটিশের বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন সামরিক মুখপাত্র জাও মিন তুন। তিনি বলেছিলেন—যারা সংবাদপত্রে এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছে, জান্তা-বিরোধিতা সমর্থন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হতে পারে।

সামরিক মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, যারা সংবাদপত্রে এই ধরনের ঘোষণা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জান্তার বিরোধিতাকে সমর্থন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।