মৃত্যুর আগে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন দগ্ধ সেই তরুণী

Looks like you've blocked notifications!

মারা গেলেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের উন্নাও শহরের নির্যাতিতা তরুণী। দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সফদরজং হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান শলভ কুমার জানান, ওই তরুণী শুক্রবার রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বৃহস্পতিবার ওই তরুণীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তাঁর দুই ধর্ষকসহ পাঁচ দুষ্কৃতকারী। জ্বলন্ত অবস্থায় ওই তরুণী রাস্তা দিয়ে আর্তচিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে যান অনেকটা পথ। সে অবস্থাতেই এক পথচারীর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ফোন করেন পুলিশকে। রবীন্দ্র প্রকাশ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী এ কথা জানান পুলিশকে। তাঁর কাছেই প্রথম সাহায্য চান উন্নাওয়ের ওই নির্যাতিতা।

গত মার্চ মাসে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি দুজন এখনো ফেরারি। গত সপ্তাহে জামিনে ছাড়া পায় অভিযুক্তরা।

গত ৫ ডিসেম্বর সকালে ধর্ষণের মামলায় শুনানির জন্য ওই তরুণী যখন আদালতে যাচ্ছিলেন, তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় পাঁচজন। সে সময় তরুণী ছিলেন রেল গেটের কাছে। এরপর তাঁকে টেনে হিঁচড়ে পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানেই তরুণীর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীর আর্তনাদে স্থানীয়রা ছুটে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ তরুণীকে যখন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, ততক্ষণে তাঁর শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে।

এরপর গতকাল শুক্রবার সকালে ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানা থেকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় ওই নির্যাতিতা তরুণী পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তরুণী বলেন, রায়বেরিলির আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে তাঁকে রেল স্টেশনের কাছে ঘিরে ধরে প্রথমে বেত দিয়ে পেটায় পাঁচজন। এরপর তাঁর গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ সময় তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে গেলে, তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

তরুণী আরো জানান, আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রেলস্টেশনে যাচ্ছিলেন। পথে ওত পেতেছিল পাঁচজন। তাদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।

এদিকে উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার অভিযোগ করা হয়, ধর্ষণ মামলায় অন্যতম আসামির এক চাচা ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে, নির্যাতিতার পরিবারের বাড়ি-দোকান সব জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি শিবমের সঙ্গে একটা সময় সম্পর্ক ছিল ওই তরুণীর। থানায় দায়ের করা এফআইআরে তরুণী জানান, প্রথমে তাঁর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল শিবম। সে সময় একপর্যায়ে শিবম তাঁকে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ভিডিও তুলে রাখে শিবম। এ সময় ওই তরুণী সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে শিবম ও তার সহযোগীরা তাঁকে ক্রমাগত শাসাতে থাকে। তাদের ভয়ে গত বছরের শেষের দিকে ওই তরুণী রায়বেরিলিতে এক আত্মীয়র বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।