যে ক্যাঙ্গারুর ছবি দেখে স্তব্ধ সবাই
অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ দাবানল থেকে বাঁচার জন্য ছুটছিল ছোট্ট ক্যাঙ্গারুটি। কিন্তু দাবানলে প্রাণ হারানো অসংখ্য প্রাণীর মতো তারও শেষ রক্ষা হয়নি। তারের বেড়ায় আটকে গিয়ে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারাতে হয় তাকেও। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের কাডলি ক্রিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ক্যাঙ্গারুর পুড়ে যাওয়ার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, এই ছবিটির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ভয়াবহতা বোঝা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের সবচেয়ে ভয়াবহ ছবি এটি। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সেভেন নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যপ্রাণীরাই। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, দাবানলে পুড়ে মারা গেছে ৫০ কোটির বেশি পশুপাখি ও সরীসৃপ।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যাচ্ছে গৃহপালিত প্রাণীরাও। দাবানলের তাণ্ডবে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের এক কৃষকের ভাগ্যে। তাঁর ২০টি গরু আগুনে পুড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বাঁচানোও কঠিন হয়ে পড়েছিল ওই কৃষকের পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ওই গরুগুলোকে যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে তাদের গুলি করে মেরে ফেলতে বাধ্য হন তিনি। সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে দাবানলে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও বন-জঙ্গল। দাবানলে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মীও।
এমন অবস্থায় উপায় না পেয়ে সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এবার দেশজুড়ে আগুন নেভাতে তিন হাজার সংরক্ষিত সেনা সদস্য কাজ করবেন বলে আজ শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে স্কট মরিসন বলেন, ‘এই বিপর্যয় ধাপে ধাপে নতুন স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে।’
সংরক্ষিত সেনা সদস্যদের নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেনল্ডস বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি।’
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এর আগেই আজ শনিবারকে ‘বিপজ্জনক দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কর্মকর্তারা। এই দাবানলে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। এ ছাড়া দেড় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
এরই মধ্যে ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে রাতারাতি তিনটি অগ্নিকাণ্ড ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এক লাখ বাসিন্দার ওই এলাকাকে ‘বিপর্যস্ত’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাজ্যটি। এ ছাড়া বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ফোন পরিষেবাও।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধোঁয়া দুই হাজার কিলোমিটার দূরের নিউজিল্যান্ডের আকাশকেও হলুদ করে দিচ্ছে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে পোড়া গন্ধ।
পরিবেশবিদরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার আকাশের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর আকার জাপানের আয়তনের চেয়ে ১৫ গুণ বড়। প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সেটি। ফিনিশ মেটেওরলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক আন্তি লিপ্পোনিন সেই মেঘকে কল্পরূপ দিয়েছেন। এক টুইটবার্তায় শেয়ার করা তাঁর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুরো ইউরোপকে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রাখে সেই ধোঁয়া। এখন তাসমান সাগর পেরিয়ে নিউজিল্যান্ড থেকেও দেখা যাচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এ জন্য কালো হয়ে উঠছে নিউজিল্যান্ডের বহু হিমবাহ। দ্রুত গলতে শুরু করেছে বরফ। পর্যটক ও স্থানীয়দের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি।