যে ১১ বই না পড়াকে ব্যর্থতা বললেন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সিইও

Looks like you've blocked notifications!

সফলতার নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। লোকচক্ষে একজন ব্যক্তিকে সফল মনে হলেও ওই ব্যক্তিই শুধু জানেন তাঁর সফলতার সীমানা কোথায়। মার্সেল শোয়ান্তেস তেমনই একজন সফল মানুষ। শোয়ান্তেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি ‘লিডারশীপ ফ্রম দ্য কোর’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। আর্থিক ও সামাজিক বিচারে তিনি অবশ্যই একজন সফল মানুষ। কিন্তু নিজের সফলতা নিয়ে শোয়ান্তেস কী ভাবেন?

মার্সেল শোয়ান্তেসের বয়স এখন ৫০। অর্থকরী ও সামাজিক মর্যাদায় তিনি ঈর্ষা করার মতো অবস্থান তৈরি করেছেন। কিন্তু এরপরও শোয়ান্তেস ভাবেন, তিনি আরো বেশি সফর হতে পারতেন। অর্থসংক্রান্ত ওয়েবসাইট সিএনবিসি ডট কমকে তিনি জানান, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে যদি তিনি ১১টি বই পড়ে ফেলতে পারতেন, তবে আজকের তুলনায় তিনি অনেক বেশি সফল হতেন। তিনি বলেন, এখন আমার বয়স পঞ্চাশ। আমি বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, আমি যদি আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে ১১টি বই পড়ে ফেলতে পারতাম, তবে আজ আরো অনেক বেশি সফল হতে পারতাম।

এর মানে শোয়ান্তেস যে ১১টি বইয়ের কথা বলেছেন সেগুলো পড়ার গুরুত্ব রয়েছে। স্বপ্নের মতো বিলাসী ক্যারিয়ারের বাস্তবায়ন ঘটাতে এই বইগুলো আপনিও পড়ে ফেলতে পারেন।

১. হাম্বল ইনকুয়ারি

দ্য জেন্টাল আর্ট অব আসকিং ইনস্টেড অব টেলিং

লেখক-এডগার এইচ শাইন

কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। একজন বস যতই অভিজ্ঞ হন না কেন, পারস্পরিক সুষম যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারলে তাঁর কর্মীরা মতবিরোধে জড়িয়ে পড়তে পারেন। কর্মক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সবারমধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ইতিবাচক হওয়া জরুরি। আর এই বইটিতে কর্মীদের সঙ্গে ইতিবাচক যোগাযোগের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক এডগার এইচ।

শোয়ান্তেসও মনে করেন আদর্শ বস হওয়ার জন্য এই বইটি পড়ে নেওয়া দরকার। কারণ বইটিতে বসদের কর্মীদের সঙ্গে ‘নম্র অনুসন্ধানী’ মনোভাব নিয়ে কথা বলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। 

২. নাইন লাইস এবাউট ওয়ার্ক

অ্যা ফ্রিথিংকিং লিডার্স গাইড টু দ্য রিয়েল ওয়ার্ল্ড

লেখক- মার্কাস বাকিংহাম ও অ্যাশলে গুডল

নাইন লাইস এবাউট ওয়ার্ক বইটিতে লেখক মার্কাস বাকিংহাম ও অ্যাশলে গুডল কর্মক্ষেত্রে বসদের সঙ্গে কর্মীর কিংবা কর্মীদের সঙ্গে বসের অসত্য বাক্য বিনিময়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন।

বইটিতে বাস্তব উদাহরণ দিতে গিয়ে লেখকদ্বয় বিশ্ববিখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান গুগুল ও অ্যামাজনের কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

মার্সেল শোয়ান্তেসের ধারণা এই বইটি কারো পড়া থাকলে অফিসে অনেকধরনের অপ্রত্যাশিত কলহ যা মিথ্যা কথার কারণে ছড়ায়, অনায়াসে সমাধা করা সম্ভব।

৩. ডেলিভারিং হ্যাপিনেস

অ্যা পাথ টু প্রফিটস, প্যাশন অ্যান্ড পারপাস

লেখক-টনি হিসিহ

জাপ্পোসের সিইও হওয়ার আগে বইটির লেখক টনি একটি কীটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতেন। তারপর তিনি পিজা ডেলিভারিও করেছেন। লেখক তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি এই বইটি লেখেন। বইটিতে টনি তাঁর বাস্তব সংগ্রামের নিপুণ বর্ণনা দিয়েছেন। আরো তিনি শুরু থেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন তা গল্পের ছলে বর্ণনা করেছেন। করপোরেট জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি কীভাবে চরাই উত্রাই পার হয়ে একজন সফল ব্যবসায়ী হসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন সেই আলোচনা বইটিতে করেছেন টনি।

মার্সেল শোয়ান্তেস মনে করেন, সফলভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এই বইটি অবশ্যই পড়া দরকার।

৪. এভরিথিং ইজ ফিগারাওটেবল

লেখক-মেরি ফোরলিও

একদিন লেখক মেরি ফোরলিওর মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘জীবনে কোনো কিছুই জটিল নয়। তুমি যা চিন্তা কর, তাই তুমি করতে পার; যদি তুমি তোমার জামার হাতা ভাজ করে ফেলতে পার। সবকিছুই করা সম্ভব।’

আপনি কর্মক্ষেত্রে অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন? মাদকে আসক্ত হয়ে গেছেন কিংবা প্রেমে বিচ্ছেদ হয়েছে আপনার? তবে পড়ে ফেলতে পারেন মেরির লেখা এভরিথিং ইজ ফিগারাওটেবল বইটি।

মার্সেল শোয়ান্তেস বিশ্বাস করেন, এই বইটি সব প্রতিকূলতার মধ্যেও একজন স্বপ্নবাজ মানুষের জন্য রয়েছে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা।

৫. এপ্লাইড ইম্পেথি

দ্য নিউ ল্যাঙ্গুয়েজ অব রিলেশনশিপ

লেখক-মাইকেল ভেনচুরা

বইটির লেখক মাইকেল ভেনচুরা বিখ্যাত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত ডিজাইন ফার্ম সাব রোজার সিইও। মাইকেলের সাব রোজা ফার্মটি আইকনিক ব্র্যান্ড গুগুল, নাইক ও ওয়ার্বি পার্কারের মতো বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে মাইকেল একটা জিনিস বুঝতে পারেন, কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সহানুভূতিশীলতার অনুশীলন খুবই জরুরি।

আর তাই তাঁর অভভিজ্ঞতার আলোকে একটি বই লেখেন যার নাম সহানুভূতি অনুশীলন যার ইংরেজি বা মূল নাম এপ্লাইড ইম্পেথি।

বইটি পড়লে জানা যাবে আসলে সহানুভূতিশীল অনুশীলন কাকে বলে ও কীভাবে তা করতে হবে। আর সেই আলোকে বাস্তবে এর প্রয়োগ কীভাবে করা যায় তাও জানা যাবে এই বইটি পড়লে।

৬. সুইচ

হাউ টু চেঞ্জ থিংস, হোয়েন চেঞ্জ ইজ হার্ড

লেখক-চিপ হিথ ও ড্যান হিথ

আপনি যদি অফিসের বস হন তবে অফিসের অনেক কিছুই (পরিবেশ, নিজের আচরণ, গতানুগতিক সিস্টেম) আপনাকে বদলাতে হবে। আর সেটা যে খুব সহজ তা কিন্তু নয়। এর জন্য আপনাকে অনেক সুন্দর ও মানবিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আর সে জন্য দরকার সুক্ষ বুদ্ধিমত্তা। চিপ হিথ ও ড্যান হিথের লেখা সুইচ বইটি পড়লে এই কাজে অনেক সহায়তা পাবেন অফিসের একজন বস।

আর এ কারণে মার্সেল শোয়ান্তেস বিশ্বাস করেন, এই বইটি আগে তাঁর পড়া থাকলে তিনি তাঁর কর্মজীবনে আরো বেশি সফল হতেন।

৭. দ্য আর্ট অব বিং আনরিজনেবল

লেসন্স ইন আনকনভেনশনাল থিংকিং

লেখক- এলি ব্রড

আপনার চারপাশে যা ঘটে, তার সবই যৌক্তিক কিংবা আপনার পছন্দমত হবে বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় আপনি এমন কিছুর মুখোমুখি হবেন যা, আপনি আগে কখনো প্রত্যাশাই করেননি। কিন্তু তখনো আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। এমন প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছিলেন বইটির লেখন এলি ব্রড। আর সেই প্রতিকূলতা জয় করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দুটি প্রতিষ্ঠান। আর সেই দুই প্রতিষ্ঠান এলিকে বিলিয়ন ডলারের মালিক হতে সাহায্য করেছে।

বইটিতে এলি লেখেন, ক্যারিয়ারে অতিমাত্রায় যৌক্তিক বা বাস্তব হওয়াটা সফলতার কারণ হতে পারে না। অতিমাত্রায় যৌক্তিক হলে অনেকসময় ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বরং সময়মত সঠিক কাজ করার প্রতিই বেশি জোর দিয়েছেন লেখক।

লেখকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মার্সেল শোয়ান্তেস জানান, কর্মজীবনে সফল হতে জীবনের এই বইটি অবশ্যই তাঁর পড়া দরকার ছিল নিজের ৩০ বছর বয়সের আগে।

৮. দ্য রোড টু ক্যারেক্টার

লেখক-ডেভিড ব্রুকস

দ্য রোড টু ক্যারেক্টার বইটি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কলামিস্ট ডেভিড ব্রুকসের একটি অনবদ্য রচনা। বইটিতে ব্রুকস ক্যারিয়ার গঠনের আগে নিজের ভেতরের চরিত্র গঠনের কথা বলেছেন। কারণ সৎ চরিত্রবান মানুষই পারে কর্মক্ষেত্রে সফল হতে।

৯. হোয়াই ডু সো মেনি ইকপেটেন্ট ম্যান বিকাম লিডারস?

লেখক-টমাস ক্যামোরো-প্রিমুজিক

মনোবিজ্ঞানী টমাস ক্যামোরো-প্রিমুজিক এই বইটিতে একটি পরিসংখ্যানে জানান, ৭৫ শতাংশ মানুষ তাঁদের মনের দ্বারা চালিত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি জানান, কর্মক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষরা নীতিনির্ধারক পর্যায়ে রয়েছেন বেশি। টমাস ক্যামোরো তাঁর বইটিতে বলতে চেয়েছেন, শুধু পুরুষরাই কেন বেশি এগিয়ে আছেন সেই পরিসংখ্যান না মিলিয়ে আমাদের উচিত ক্যারিয়ার গড়তে মানুষ কতটা সমস্যার সম্মুখীন হন।

১০. দ্য আউটসাইডার

এইট আনকনভেনশনাল সিইওস এন্ড দেয়ার রেডিক্যাল্লি রেশনাল ব্লুপ্রিন্ট ফর সাকসেস

লেখক-উইলিয়াম থরানডিকে

আটটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নিয়ে দ্য আউটসাইডার বইটি লেখেন হার্ভার্ড থেকে পাস করা লেখক উইলিয়াম থরানডিকে। বইটিতে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সফল হওয়ার কিছু সুক্ষ্ম দিক নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

লেখকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন মার্সেল শোয়ান্তেসও। মার্সেল মনে করেন, একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য দরকার নানামুখী প্রজ্ঞা ও দক্ষতা। আর এজন্য এই বইটি পড়ার ওপর জোর দেন মার্সেল শোয়ান্তেস।

১১. কনশাস ক্যাপিটালিজম

লিবারেটিং দ্য হিরোয়িক স্পিরিট অব বিজনেস

জন মিকি ও রাজেন্দ্র সিসোদিয়া

হোল ফুডের সিইও জন মিকি ও কনশাস ক্যাপিটালিজমের সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজেন্দ্র সিসোদিয়া একসঙ্গে চিন্তা করেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চাহিদা অনুযায়ী কীভাবে পুঁজিবাদ ও সফল ব্যবসা একসঙ্গে কাজ করতে পারবে?

সেই চিন্তা অনুযায়ী দুজনে পুঁজিবাদ ও সফল ব্যবসার জন্য মুক্ত উদ্যোগের সঙ্গে সম্পত্তির অধিকার, নতুনের প্রবর্তন, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক সরকার কীভাবে কাজ করলে মুনাফার প্রসার ঘটানো সম্ভব এ নিয়ে আলোচনা করেন।

আর এই বইটি সম্পর্কে মার্সেল শোয়ান্তেস জানান, সফল উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে হলে অবশ্যই কনশাস ক্যাপিটালিজম বইটি পড়া উচিত।