রিয়াদে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

Looks like you've blocked notifications!
রিয়াদের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিদ্যালয় (ইংরেজি শাখা) ও ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাচ ও গান পরিবেশন করে। ছবি : এনটিভি

সৌদি আরবের রিয়াদে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গত রোববার বিকেলে দূতাবাসের অডিটরিয়ামে সৌদি আরবের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সৌদি আরবের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক জাতীয় কমিশনের মহাসচিব হাত্তান বিন সাম্মান, বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির পক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সৌদি আরব প্রতিনিধি ড. ইব্রাহিম আল যিক, ওআইসির সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়ক মহাপরিচালক মিজ আমিনা আল হাজরি বক্তব্য দেন। 

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে কূটনৈতিক কোরের ডিন জিবুতির রাষ্ট্রদূত দায়া আদদীন বামাখরামা, ভারতের রাষ্ট্রদূত ড. অসাফ সায়ীদ, শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত পি এম রাজা, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত আদনান ভিল্লালুনা আলন্ত বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।   

রাষ্ট্রদূত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মাতৃভাষা বাংলা প্রসারের বিষয়ে বাঙালি জাতির অবদানের কথা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে পৃথিবীর ইতিহাসে দিবসটি সংগ্রাম ও ভাষার অধিকার আদায়ের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্রুতই পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মাতৃভাষা রক্ষায় তিনি দেশ কাল ভেদে পৃথিবীর সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সৌদি আরবে বাংলাদেশে দূতাবাস অডিটরিয়ামে সৌদি আরবের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দূতাবাস কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। ছবি : এনটিভি

অনুষ্ঠানে বক্তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষা শিক্ষার ওপর জোর দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ ও নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ওপর জোর দেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জন : সংকট এবং সম্ভাবনা’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন প্রযুক্তির দুনিয়ায় ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার সমাবেশ ঘটাতে হবে। যাতে সবাই যার যার ভাষায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ ভাষার চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখার আহ্বান করেন। 

বক্তারা, ২১ ফ্রেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিতে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে রিয়াদের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিদ্যালয় (ইংরেজি শাখা) ও ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাচ ও গান পরিবেশন করে। 

অনুষ্ঠানে নয়জন রাষ্ট্রদূতসহ ৪৫ জন কূটনীতিক যোগদান করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র ও ১২টি ভাষায় একুশে ফেব্রুয়ারির গান পরিবেশন করা হয়। 

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে ওই দিন সকালে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। 

এরপর রাষ্ট্রদূত দূতাবাস চত্বরে স্থাপিত শহীদ মিনারে ফুলে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। 

এ উপলক্ষে দূতাবাস সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ সময় রাষ্ট্রদূত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রবাসীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। 

রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। 

সকালে বাংলাদেশ কমিউনিটির আলচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন রিয়াদের অভিবাসী প্রফেসর ড. রেজাউল করিম, ব্যবসায়ী এম আর মাহবুব ও আব্দুস সালাম। 

বক্তারা একুশের প্রেক্ষাপট, একুশের চেতনা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আলোচনা শেষে মহান শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দেশও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।