লিডার্স সামিটের প্রথম দিন : বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর ওপর জোর বিশ্বনেতাদের

Looks like you've blocked notifications!
বৃহস্পতিবার থেকে দুদিনব্যাপী ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে গতকাল (২২ এপ্রিল) থেকে দুদিনব্যাপী ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। এই জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন বিশ্বের ৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

উদ্বোধনী ভাষণে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি আপনাদের অনেকের সঙ্গে জলবায়ু সংকট নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানির সংকট সম্পর্কে জেনেছি। আমরা এও জেনেছি যে, সফলতা অর্জনের জন্য পরিশোধিত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব কতটা।’

কমলা হ্যারিস আরও বলেন, ‘জো বাইডেন হচ্ছেন আমাদের কংগ্রেসের প্রথম সদস্য যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করছেন। এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে যোগ দিচ্ছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর স্বাগতিক ভাষণে ‘ক্লিন টেকনোলজি’ বা পরিশোধিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান অস্বীকার করার মতো বিষয় নয়। আমাদের সবাইকে, বিশেষ করে যারা বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে পরিচিত তাদের, এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিশোধিত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর তা করতে হবে নিজেদের জনগণের স্বার্থে।’

বাইডেন আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান থেকে আমরা জেনেছি যে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই। এই দশকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির বিরুদ্ধে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের উষ্ণায়নের মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কার্বণ নিঃসরণের মাত্রা অর্ধেক করার ঘোষণার পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও ২০৬০ সালের মধ্যে তাঁর দেশে তা শূন্যে আনার ঘোষণা দেন। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে আয়োজিত ভার্চুয়াল সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন দুই বিশ্বনেতা।

এ ছাড়া সম্মেলনে যোগ দিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ শূন্যে আনার ঘোষণা দেন। আর, ইউরোপের দেশগুলোতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ ভাগ কার্বণ নিঃসরণ কমানোর আশ্বাস দেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দান লিয়েন।

এ ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও সবুজ বিপ্লবের ঘোষণা দেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বকে এক হতে আহ্বান জানান। ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সৌদি বাদশা সালমানও যোগ দেন।

জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র যে গ্রিন হাউস গ্যাস ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ থেকে ৫২ শতাংশ কমানোর বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেজন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি উষ্ণায়নের মারাত্মক প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা এরই মধ্যে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।’

এই শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তাঁর দেশ আগামী কয়েক বছর কয়লার ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ২০২৬-২০৩০ সালে ক্রমেই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনবে।

অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন কোনো লক্ষ্যের প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে পরিশোধিত জ্বালানি শক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলেছেন, যাতে করে বিনিয়োগকে গতিশীল করা যায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যে প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় ফিরে যাচ্ছে তার প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে’ এবং যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে একে সাধুবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব রোধে এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতি বছর আমরা গড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করি, যা আমাদের জিডিপির প্রায় দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ।’

শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়া বিশ্বনেতাদের মধ্যে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ আরও অনেকে।