ল্যাব থেকে করোনা ছড়ানোর তত্ত্ব নাকচ করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন : ডব্লিউএইচও

Looks like you've blocked notifications!
করোনার উৎপত্তি গবেষণাগারে, এমন অভিযোগ শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে চীন। ছবি : রয়টার্স

কোভিড-১৯ চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে- এমন অভিযোগ সমূলে নাকচ করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এ কথা বলা হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্ব ন্যূনতম সম্ভাব্য পর্যায়ের একটি। তবে একে নাকচ করতে হলে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’

২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম মহামারি আকার ধারণ করা এই করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। চীন সরকার বরাবরই গবেষণাগার থেকে ছড়ানোর তত্ত্ব নাকচ করে আসছে।

ভাইরাসের উৎপত্তি অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক একটি বিশেষজ্ঞ দল এ বছরের জানুয়ারিতে উহান সফর করেছে। চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া নমুনার ওপর নির্ভরশীল তাঁরা।

গবেষকদের সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ‘ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত সময়ের এবং নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত ও নমুনা বিনিময়ের’ আহ্বান জানান।

উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞেরা। অপরাপর করোনাভাইরাসের গবেষণা ও নমুনা মজুতের দিক দিয়ে ইনস্টিটিউটটি সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেকেই বলে আসছেন, করোনাভাইরাস হয়তো গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে। কিন্তু, চীনের বিশেষজ্ঞেরা এবং ডব্লিউএইচও মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানো প্রায় অসম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর গবেষক দলের প্রধাস পিটার বেন এমবারেক বলেছেন, তাঁরা উহানের গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর কোনো প্রমাণ পাননি। তিনি বলেছেন, ‘চীনের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পক্ষ থেকে আমাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদন লেখার পর, তা থেকে কিছু বাদ দেওয়ার মতো কোনো চাপ ছিল না।’

এ ছাড়া উহানে ভাইরাস ২০১৯ সালের অক্টোবর বা নভেম্বরেই ছড়িয়েছে- সে আশঙ্কা প্রবল বলে জানিয়েছেন ড. এমবারেক। তবে চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে গত বছরের ৩ জানুয়ারি প্রথম সংক্রমণের কথা জানিয়েছিল।

এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ১৩টি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের কাছে গবেষণার জন্য ‘পূর্ণাঙ্গ প্রবেশাধিকার’ চাওয়া হয়। ‘কিন্ত চীন অনেকটা সময় নিয়েছে, এমনকি পরিপূর্ণ এবং মৌলিক তথ্য উপাত্ত ও নমুনা সংগ্রহে বাধাও ছিল’, বলেন ড. এমবারেক।

ভাইরাসটির উৎপত্তি গবেষণাগারে তা অস্বীকার করে চীন বলে আসছে, এটি প্রথম উহানে ধরা পড়ে। এর মানে এই নয় যে, এখানেই ভাইরাসের উৎপত্তি। এমনটি নাও হতে পারে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, আমদানি করা বরফজাত মাছের সঙ্গে ভাইরাসটি এসে থাকতে পারে।

তবে চীন তাদের দেশে করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য প্রচুর নমুনা পরীক্ষা, কড়া লকডাউন ও ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটি।

এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১২ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এদের মধ্যে ২৭ লাখের বেশি মানুষের এ রোগে মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান সাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, চীনে এ পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৬৩৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১১ জনের করোনা ধরা পড়েছে আর বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে মাত্র ১৮০ জন। এ পর্যন্ত ১৬ কোটির বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করেছে দেশটি।