সাবেক রাষ্ট্রদূত খায়রুজ্জামানকে দেশে পাঠানো যাবে না : ইউএনএইচসিআর

Looks like you've blocked notifications!
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর মালয়েশিয়া কার্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

যদিও বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এম খায়রুজ্জামান জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব না। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর ।

ইউএনএইচসিআর এর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় গণমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের খবরে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউএনসিএইচআর দেশটির সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার তাঁকে তাদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে পারে না। কারণ এতে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে।

শরণার্থী পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী, সরকার কোনো শরণার্থীকে এমন কোনো স্থানে পাঠাতে পারে না; যেখান তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়বে। শরণার্থীদের মর্যাদা সম্পর্কিত ১৯৫১ সালের কনভেনশন চুক্তি অনুযায়ী, উক্ত আইনটি সব দেশের জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক।

এম খায়রুজ্জামান (৬৫) ২০০৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে একজন ইউএনএইচসিআর কার্ডধারী। গত বুধবার একটি অজ্ঞাত এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি তাকে আমপাং-এ তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷

২০০৭ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। দুই বছর পর, সরকার পরিবর্তন হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তিনি দেশে ফিরে আসতে অস্বীকার করেন এবং তখন থেকেই মালয়েশিয়ায় নির্বাসনে রয়েছেন।

খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকায় ১৯৭৫ সালের জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা তাঁকে অভিযোগের মুখোমুখি করা উচিত বলে মনে করেন।

খায়রুজ্জামান কথিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ১৯৯৬ সালে দেশে বিনা বিচারে প্রায় চার বছর আটকে ছিলেন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাকে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে গণ্য করে।

মানবাধিকার আইনজীবী এম রামাচেলভাম বলেছেন, প্রত্যর্পণ আইন ১৯৯২-এর অধীনে কঠোর প্রয়োজনীয়তাগুলো মেনে চললে সাবেক রাষ্ট্রদূতকে শরণার্থী হিসাবে তাঁকে তাঁর মূল দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না।

বার কাউন্সিলের অভিবাসী, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক কমিটির সহ-সভাপতি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক সারিবদ্ধতার কারণে তাঁর জীবন বা স্বাধীনতার জন্য হুমকির সম্মুখীন হলে সরকারের তাঁকে ফেরত পাঠানো উচিত নয়।’

অপরদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য খায়রুজ্জামানের আবেদন ত্বরান্বিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করেছে; যাতে তিনি সেখানে অবস্থানরত তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে যোগদান করতে পারেন।

এ ব্যাপারে এইচআরডব্লিউ এশিয়ার উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, খায়রুজ্জামানকে নির্বাসিত করা হলে তাঁকে গ্রেপ্তার, হেফাজতে অপব্যবহার এবং নিজ দেশে নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হবে। এই মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হবে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তৃতীয়-দেশে পুনর্বাসনের সুবিধা দেওয়া।