সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে মিয়ানমারের চিকিৎসকেরা
মিয়ানমারে ভোটে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার প্রতিবাদে দেশটির চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের অন্তত ৩০টি শহরের ৭০টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন। আজ বুধবার থেকে তাঁরা সামরিক শাসনের অধীনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সম্প্রতি গঠিত মিয়ানমার সিভিল ডিজওবিডিয়েন্ট মুভমেন্টের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সীমাহীন দুর্ভোগে নিমজ্জিত জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনী তার নিজের স্বার্থ চাপিয়ে দিয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে এরই মধ্যে মিয়ানমারে তিন হাজার ১০০ বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছে।
সেনাশাসনে ক্ষুব্ধ সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সেনা কর্তৃপক্ষ আমাদের দরিদ্র রোগীদের প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে; ফলে আমরা তাদের যেকোনো আদেশ প্রত্যাখ্যান করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত চারজন চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁরা সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন। ২৯ বছর বয়সী ইয়াঙ্গুনের একজন চিকিৎসক রয়টার্সকে বলছিলেন, ‘আমি চাই সেনা সদস্যেরা তাদের ছাউনিতে ফিরে যাক; না হলে আমি হাসপাতালে ফিরতে পারছি না।’
‘এই ধর্মঘট কতদিন ধরে চলবে সে ব্যাপারে আমার কোনো সময়সীমা জানা নেই। এটা নির্ভর করবে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর’, যোগ করেন চিকিৎসক।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও তরুণেরাও সিভিল ডিজওবিডিয়েন্ট মুভমেন্টের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন। তাঁরা এনএলডি নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির মুক্তিরও দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সেনাশাসনের প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। গতকাল রাতে ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা রাস্থায় নেমে থালা-বাটি বাজিয়ে সেনাশাসনের বিরোধিতা করেছে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ নির্বাচিত সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে গত সোমবার দেশটির ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনারা। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সেনাবাহিনীর দাবি, সু চির দল এনএলডি অনিয়ম করে ওই নির্বাচনে একচেটিয়া জয়লাভ করেছে।
এরই মধ্যে সু চির সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে সেনাসদস্যদের দিয়ে নতুন করে কেবিনেট গঠন করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। ঘটনার শুরু থেকেই সু চির অবস্থান নিয়ে তাঁর দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এনএলডির বরাত দিয়ে বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সু চিকে তাঁর নিজের কম্পাউন্ডে হাঁটাচলা করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দলের আরো কিছু নেতাকে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে নিজেদের বাসায় পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের গৃহবন্দি করেই রাখা হয়েছে। ফলে এনএলডির নেতারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।