সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সৌদি সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি। গত শনিবার সৌদি আরবে সফররত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় সালমান এফ রহমান সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। তিনি বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ ও সৌদি রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে আগামী দিনে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন লাভজনক খাতে সৌদি বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে তৈরি পোশাক পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হিমায়িত মাছ ও ওষুধ আমদানি করা হয় উল্লেখ করে বলেন, সৌদি আরব চাইলে বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস আমাদানির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির মাধ্যমে দুদেশের বাণিজ্য অসমতা দূর করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ১৩৭টি পণ্যের সৌদি বাজারে প্রবেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সালমান এফ রহমান সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। বর্তমানে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে।
সালমান এফ রহমান ২০১৯ সালে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের সময় দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকগুলোর পর্যালোচনা করে কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার অনুরোধ জানান। এ সব সমঝোতা স্মারকসহ বাণিজ্য সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। এ কমিটি কিছু দিন পরপর এ সব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে দুদেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে কাজ করবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৌদি মন্ত্রীকে জানান, সৌদি আরব চাইলে বাংলাদেশ সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করে বিশেষ সুবিধা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
দুদেশের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) বিষয়ে ২০১৮ সালে প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকটি দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে সালমান এফ রহমান সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। উপদেষ্টা বলেন, এ সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে সৌদি কোম্পানির সরাসরি বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে অনুরোধ জানালে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ইতিবাচক মতামত প্রদান করেন। এ তহবিলের আওতায় তিনি বাংলাদেশে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপন নির্মাণ ও কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
সালমান এফ রহমান সৌদি আরবের বিদেশি অভিবাসীদের ব্যবসা-বাণিজ্য বৈধভাবে করার লক্ষ্যে সৌদি সরকারের গৃহীত এন্টি কনসিলমেন্ট ল’র বিষয়ে উল্লেখ করে বাংলাদেশি যে সব অভিবাসী সৌদি আরবে ব্যবসা করছে তাদের সহায়তার জন্য সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশিদের সৌদি আরবে বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার বিষয়ে সৌদি সরকার সুযোগ দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদের ব্যবসা নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধভাবে সৌদি আরবে ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছে। সৌদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে সব সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানান।
এ ছাড়া, সালমান এফ রহমান সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীকে একটি সৌদি প্রতিনিধি দল নিয়ে কাছাকাছি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ ও শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আশা ব্যক্ত করেন।
রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এ ভার্চুয়াল সভায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ও বাংলাদেশ সরকারি- বেসরকারি অংশীদারীত্ব কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও একটি ব্যবসায়ী দল নিয়ে শনিবার পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরবে আছেন। সফরকালে তিনি দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে কয়েকজন মন্ত্রিসহ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সভায় অংশ নেওয়ার কথা।