হিরোশিমায় জি-৭ সম্মেলনে কী পেলেন জেলেনস্কি?
জাপানের হিরোশিমায় ক্ষমতাধর সাত দেশের জোট জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছেন যুদ্ধ কবলিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাখমুতের কথাও।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “ঐতিহাসিক হিরোশিমায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধে সম্পূর্ণ ধসে যাওয়া বাখমুত শহরের কথা মনে পড়ছে। ওই শহরের মানুষের কথা মনে পড়ছে।” জি-৭ সম্মেলনের শেষ দিন কার্যত জয় করে নিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। অধিবেশনে অংশ নেওয়া দেশগুলো আবার জানিয়ে দিল, ইউক্রেনকে সব রকম সাহায্য করা হবে।
ইউক্রেন জি-৭ এর অংশ নয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাকি রাষ্ট্রপ্রধানদের মতো সুট নয়, সামরিক শার্ট পরেই এদিনের অধিবেশনে অংশ নেন তিনি। হিরোশিমা মেমোরিয়াল জাদুঘর প্রদর্শন শেষে সম্মেলনে যোগ দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “বাখমুত শহরে আর একটি বাড়িও দাঁড়িয়ে নেই। পুরো শহরটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। হিরোশিমা মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের ছবিগুলো দেখে বাখমুতের কথাই মনে পড়ছে।” বিশ্বের কাছে আরও একবার সাহায্যের আবেদন জানান তিনি। সবার প্রতি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ তার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “ইউক্রেনকে আরও ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দেওয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে ইউক্রেনে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সংস্কারে এই ডলার কাজে লাগাতে পারবে। জি-৭ সম্মেলনে সার্বিকভাবে ইউক্রেনের পাশে থাকার শপথ নেওয়া হয়েছে।”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী এদিন তার ভাষণে বলেন, “পরমাণু যুদ্ধে শেষপর্যন্ত কোনো দেশই জয়ী হতে পারে না। তাই ইউক্রেন যুদ্ধ যেন কোনোভাবেই সে পথে না হাঁটে।” এ সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকির উদাহরণ দেন তিনি।
জাপানি সাংবাদিকদের বক্তব্য, এই সম্মেলন করে দেশের প্রধানমন্ত্রী মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন। যেভাবে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা জাপানের মানুষ ভালো চোখে দেখেছেন। বস্তুত, এশিয়ায় জাপান একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যারা ইউক্রেনকে সার্বিকভাবে সমর্থন করছে।
মোদির সঙ্গে বৈঠক
জাপানে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জেলেনস্কির মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছে। অধিবেশনের বাইরে দুই নেতা বৈঠক করেছেন। মোদি জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, যুদ্ধ থামানোর জন্য ভারত সব রকম চেষ্টা চালাবে। জেলেনস্কিকে সাহায্য করার কথাও বলেছেন মোদি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষ নেয়নি। মধ্যবর্তী অবস্থান ধরে রেখেছে। জাতিসংঘে যুদ্ধ সংক্রান্ত সমস্ত ভোট থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে। এই প্রথম সরাসরি মোদি ইউক্রেনকে সমর্থনের কথা বললেন বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। মোদি-জেলেনস্কি বৈঠক সে কারণেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। মোদি বলেন, “যুদ্ধ কখনও কোনো সমাধান হতে পারে না। ফলে চলতি যুদ্ধ থামানো অত্যন্ত জরুরি।”