৭২ ঘণ্টায় তিন মন্ত্রীসহ একাধিক বিধায়কের পদত্যাগ, যোগীরাজ্যে চাপে বিজেপি?

Looks like you've blocked notifications!
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ছবি : সংগৃহীত

ভারতে এ মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন আসন্ন। রাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যোগী আদিত্যনাথের সরকার। কিন্তু, নির্বাচনের ক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন রাজ্যে প্রকট হচ্ছে বিজেপির অন্তর্কোন্দল আর বিদ্রোহ। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হতেই যোগীদূর্গে আছড়ে পড়ছে একের পর এক ধাক্কা। টানা তিন দিনে মন্ত্রিসভা ছেড়েছেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য, দারা সিংহ চৌহান ও ধরম সিংহ সাইনি। এ ছাড়া ছয় জন বিধায়কও বিজেপি ছেড়েছেন।

এর আগে রাজ্যে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক দল সমাজবাদী পার্টির (সপা) শরদ পাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন—উত্তরপ্রদেশের বিজেপি ছেড়ে ১৩ জন বিধায়ক সপামুখী হচ্ছেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সঠিক হয়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, আপাতত যোগীরাজ্যে একের পর এক বিজেপিনেতা সপা’র প্রেসিডেন্ট অখিলেশ যাদব শিবিরের দিকে ঝুঁকছেন।

এদিকে, বিজেপি ছেড়ে দেওয়া মন্ত্রী ধরম সিং সাইনি জানান দিয়েছেন—আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন একজন করে বিজেপি বিধায়ক দল ছাড়বেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার যোগীর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে স্বামী প্রসাদ মৌর্য সদর্পে বলেছিলেন—তিনি যে শিবিরে থাকেন, তাদেরই সরকার গঠিত হয়।

এককালে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বিএসপি সরকারের মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। পাঁচ বারের বিধায়ক এই প্রবীণ রাজনীতিক বলছেন, তাঁর এ পদক্ষেপে বিজেপিতে ‘ভূমিকম্প’ হবে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ধরম সিং সাইনি বিজেপি ছেড়ে সপা’র নেতা অখিলেশের সঙ্গে দেখা করেন। সে ছবি টুইট করে অখিলেশ তাঁকে দলে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন।

এ সব ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের ভোট-পূর্ববর্তী অঙ্ক অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিজেপি ছেড়েছেন ছয় বিধায়ক

উত্তরপ্রদেশের তিন্ডওয়ারি, তিলহারের বিধায়কসহ একাধিক হেভিওয়েট রাজনীতিক এরই মধ্যেই বিজেপির ‘পদ্ম’ ছুড়ে ফেলেছেন। তাঁরা সপা’র ‘সাইকেল’ শিবিরের দিকেই যেতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।

এসব বিধায়কের অনুসারীও যে দল বদল করতে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সব মিলিয়ে, বিজেপির দুর্গে এ ঘটনা বেশ বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন অনেকেই। কয়েকদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন জনমত জরিপে উত্তরপ্রদেশে যোগীর রথকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হচ্ছিল, সেখানে নতুন এ দলবদলের হিড়িক হিসাব-নিকাশ পাল্টাতে পারে কি না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।

প্রশ্ন উঠছে—৭২ ঘণ্টায় বিজেপির নয় বড় নেতার দলবদল গেরুয়া শিবিরে কি আদৌ প্রভাব ফেলবে?

এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় সামনে আসছে। যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যে ঠাকুর বা ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। উত্তরপ্রদেশে যোগীর কর্তৃত্ব ঘিরে এরই মধ্যে সেখানে ঠাকুরদের সঙ্গে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কিছুটা মন কষাকষি রয়েছে বলে মনে করেন বহু বিশ্লেষক।

এদিকে, গত তিন দিনে যে মন্ত্রীরা বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে দুজনই অ-ব্রাহ্মণ শ্রেণির প্রতিনিধি। ভোট-অঙ্কের হিসাবে যোগীকে নিয়ে ব্রাহ্মণদের মধ্যে যে অসন্তোষ রয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে বিজেপি দলিতদের ভোটব্যাংকে নজর রেখেছিল। তবে, বর্তমানে যেভাবে দলিত হেভিওয়েটরা অখিলেশ শিবিরের দিকে যাচ্ছেন, তাতে বিজেপির বহু অঙ্কের গড়মিল হবে কি না এবং রাজ্যের মসনদে কে থাকবে, তার উত্তর মিলবে ১০ মার্চ। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৭ মার্চ শেষ হবে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন।