ভারতের কলেজে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম অধ্যক্ষ
ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষকে দেখা হয় নিগ্রহের দৃষ্টিতে। দেশটির অধিকাংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। তবে কিছুটা হলেও অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করেছেন। ভারতে এই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের একজন ব্যক্তি কলেজের অধ্যক্ষ হতে যাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হতে যাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মাস থেকে তিনি এই দায়িত্ব নেবেন।
কলকাতায় নিজ বাসভবনে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তবে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ফলাও প্রচার হওয়ায় তিনি কিছুটা বিব্রত। এরই মধ্যে তিনি অনেকের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন। মানবী বলেন, দেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের গ্রহণযোগ্যতার জন্য আসলেই এটি বড় পদক্ষেপ। তবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে মানবীর জন্ম। ওই সময় তাঁর নাম ছিল সোমনাথ। ২০০৩ সালে লিঙ্গ পরিবর্তনের অপারেশনের পর তাঁর নাম হয় মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের অপারেশনের আগে ও পরে কর্মক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েন। লিঙ্গ পরিবর্তনের আগে তিনি টানা আট বছর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ওই সময় নারী না পুরুষদের বাথরুম তিনি ব্যবহার করবেন এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ওই সময় অনেকেই তাঁকে নারী বলে ভুল করত। অবশ্য পরে মানুষ বুঝতে পারত তিনি পুরুষ। তখন অনেকেই তাঁকে পুরুষের পোশাক পরতে বলত।
মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, পদের জন্য তিনি কখনোই লালায়িত ছিলেন না। তবে যে যেমনই হোক না কেন, তাঁর ভালো কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই মেলে।
বর্তমানে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বর্তমান কর্মস্থল পশ্চিম মোদিনীপুরের বিবেকানন্দ শতবর্ষী মহাবিদ্যালয়ের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন। আগামী ৮ জুন তিনি ছাড়পত্র পাবেন বলে আশা করছেন। মানবী বলেন, ছাড়পত্র পাওয়ার পরই তিনি কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেবেন।
এরই মধ্যে মানবী তাঁর নতুন কর্মস্থল কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, সবাই খুব খুশি হয়েছেন। আর কলেজের কর্মকর্তারাও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজ নদীয়া জেলার কল্যাণী ইউনিভার্সিটির অধীনে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রত্তন লাল হাংলু বলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে কলেজের আগামী অধ্যক্ষ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।