মোদির সফর নিয়ে ঢাকাকে গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকির বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এ খবর জানিয়েছে।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, মোদির সফরকে কেন্দ্র করে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ঢাকাকে সতর্ক করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। দুই দেশের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে এমন জঙ্গিদের মোকাবিলায় ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা একে অন্যের মধ্যে তথ্য-বিনিময় করেছে এবং তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করছে।
ডেইলি মেইল গতকাল শুক্রবার খবরটি প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে আজ শনিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে কিছু জানি না এখনো।’ কোথায় এ তথ্যটি জানা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য থাকতে পারে।’ আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদুল হক এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে ভারতে জেএমবির সাম্প্রতিক তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বর্ধমানে ঘাঁটি গেড়েছে জেএমবি।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল আরো জানিয়েছে, আইএসে যোগদানের উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকার যুবকদের প্রলোভন দেখাচ্ছে জেএমবি। এ উদ্দেশে সংগঠনটি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারে নিজেদের শাখা খুলেছে।
সূত্রের বরাতে খবরে উল্লেখ করা হয়, আইএসের এক নেতা গত বছর চট্টগ্রামে জেএমবি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই সময়ই আইএসের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ আরো কিছু জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইএসের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে খবরে বলা হয়, গত তিন মাসে আইএসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে আটক করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সর্বশেষ ২৫ মে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোকাকোলাতে কর্মরত একজন আইটি ম্যানেজারসহ দুজনকে আটক করে আইএসের কর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে সিরিয়ায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ শেষ করে বাংলাদেশে যাওয়ার পথে ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে চারজনকে আটক করা হয়।
গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ ও এর সীমান্তবর্তী ভারতের বেশির ভাগ কট্টরপন্থী ইসলামিক দল আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অন্যান্য এলাকায় এদের তৎপরতা দেখা গেছে। ওই সব জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে জেএমবি। তাঁদের মূল লক্ষ্য ভারতের কিছু অংশ এবং বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
ভারতের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডেইলি মেইলকে জানান, জেএমবি-আইএসের হুমকির বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা যাবে না। এই ব্যাপারে দুই দেশের সহযোগিতা নিশ্চিতভাবে প্রযোজন।
উল্লেখ্য, ৩৬ ঘণ্টার সরকারি সফরে আগামী ৬ জুন বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর বাংলাদেশ সফরে রাজধানীর বাইরে ভ্রমণ নেই, জাঁকজমকপূর্ণ কোনো অনুষ্ঠানও থাকছে না।
আগামী ৬ জুন সকালে মোদি ঢাকায় পৌঁছাবেন। প্রথমে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাদের শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। এর পর মোদি ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসা পরিদর্শন করবেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর পক্ষে মৈত্রী সম্মাননা পদক নেবেন নরেন্দ্র মোদি। এ পর্যন্ত ২২৬ ভারতীয়কে এ সম্মাননা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন মোদি। এর মধ্যে মনোযোগ থাকবে বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী পারস্পরিক সহায়তা ইস্যু।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের সরকারপ্রধান। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একই হোটেলে সাক্ষাৎ করবেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনাও মোদির সম্মানে সোনারগাঁও হোটেলেই ডিনারের আয়োজন করেছেন।
৭ জুন নরেন্দ্র মোদি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করবেন। কূটনৈতিক অঞ্চলে ভারতের হাইকমিশনের একটি দপ্তরও (চ্যান্সারি) উদ্বোধন করবেন।
ভারতে ফেরার আগে মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনের উদ্দেশে একটি বক্তৃতা দেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও তরুণদের সামনে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব নিয়েও কথা বলবেন মোদি। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা অন-অ্যারাইভাল (পৌঁছানোর পর ভিসা) ও ই-ভিসা সুবিধা আরো জোরদার করবেন তিনি।
এ ছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, জাহাজশিল্প ও সুন্দরবন রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে স্বাক্ষর করবে দুই দেশ। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকায় আসতে অস্বীকৃতি জানালে সফরটি সাফল্যের মুখে দেখেনি। তবে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মোদির ঢাকা সফর হবে সবার থেকে আলাদা।