দেশে ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া সালমা

Looks like you've blocked notifications!

পাঁচ বছর আগে গাইবান্ধা থেকে হারিয়ে যান সালমা বেগম (৩৮)। ২০১৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে দেখা যায় সালমাকে। আজ সোমবার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে সালমাকে বাংলাদেশে তাঁর স্বজনদের হাতে তুলে দেন ভারতের প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

২০১৫ সালে হুগলিতে খুঁজে পাওয়া সালমা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন। হুগলিতেই জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র নামের একটি বেসরকারি সংস্থার হোমে তাঁর চিকিৎসা করা হয়।

জানা যায়, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সালমা বেগমের খোঁজ মেলে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে দেখা যায় সালমাকে। কিন্ত সেই সময় জানা যায়নি তিনি বাংলাদেশি। কারণ, সালমা তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং বিধ্বস্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর আরামবাগ এলাকার স্থানীয় মানুষজন তাঁকে উদ্ধার করে খবর দেয় পুলিশে। পরে পুলিশের সহায়তায় সালমা বেগমকে তোলা হয় হুগলি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে সালমাকে রাখা হয়, হুগলির জঙ্গিপাড়া ব্লকের বাগনডা গ্রামে অবস্থিত জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র (এনজিও) নামের একটি হোমে।

সেই হোমে রেখেই  সালমার মানসিক চিকিৎসা শুরু হয়। চলে তার স্মৃতিশক্তি ফেরানোর জন্য কাউন্সেলিংয়ের কাজও। অবশেষে আস্তে আস্তে নিজের স্মৃতিশক্তি ফিরে আসতে থাকে সালমার। মনে পড়ে যায় দেশের কথা। মনে পড়ে পরিবারের কথাও। আর সেই সূত্র ধরে জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র নামের ওই হোমটি বাংলাদেশে সালমার পরিবারের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেইসঙ্গে সালমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করার চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল সার্ভিস ট্রাস্ট (বিএলএসটি)-এর সহায়তায় সালমাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি গতি পায়।

এই বিষয়ে জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অভিষেক মুখোপাধ্যায় বলেন, “সালমাকে উদ্ধারের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বধার’ প্রকল্পের অধীনেই হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সালমাকে সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে সালমাকে তাঁর নিজের দেশ বাংলাদেশে তাঁর বাবা মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।”

অভিষেক বলেন, ‘পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে সালমাকে বাংলাদেশের তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন হুগলি ডিস্ট্রিক্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (ডিআইবি), এনজিওর কর্মকর্তারা, পেট্রাপোল স্থল বন্দরের পুলিশ এবং সালমার পরিবারের লোকজন। অভিষেক মুখোপাধ্যায় বলেন,  ‘সালমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সালমার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়।’

হুগলি জেলার জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র হোমের তরফে জানানো হয়, প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের গাইবান্দা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা সালমা নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর তাঁকে কোনো লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি এক নারী চোরাপথে ভারতে নিয়ে আসে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলায় খোঁজ মেলে সালমার।

জানা যায়, বাংলাদেশে সালমার পরিবারে তাঁর স্বামী ও দুটি ছেলে আছে। তবে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর সালমা দীর্ঘদিন কোথায় ছিল তা জানা যায়নি।