বিএসএফের দুশ্চিন্তা ২৬০ গ্রামের মানুষ নিয়ে
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে এতদিন ধরে রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকা কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে। ভারতীয় সীমানা লাগোয়া প্রায় ২৬০টি গ্রামের আনুমানিক ৭০ হাজার মানুষ চুক্তির আওতায় পড়ছে না। ফলে এই মানুষগুলোর দায় কে নেবে, আর এখান থেকে চোরাচালান হলে কে রুখবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিএসএফ।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) খবরে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বই কমেনি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর।
বুধবার কলকাতায় এসে বিএসএফের ইন্সপেক্টর জেনারেল (সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার) সন্দীপ সালুঙ্কে জানান, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তির বাইরে থাকা ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা চোরাচালান, পাচারের মতো নানা অবৈধ কাজের সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত। এই জায়গাগুলোকে যদি চুক্তির আওতায় নিয়ে আসা যেত তাহলে ভালো হতো। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার বলা সত্ত্বে কোনো প্রতিশ্রুতি পাইনি।’
বিএসএফের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (ইনটেলিজেন্স) এস পি তিওয়ারি বলেন, অপরাধ, জাল নোট, নারীপাচার এবং চোরাচালানের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে ওই সমস্ত এলাকায়; যা ঠেকাতে মাঝেমধ্যেই জওয়ানদের গুলি চালাতে হচ্ছে। গত দু-তিন বছরে গুলি চালানোর ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে জওয়ানদের। অথচ দেশের স্বার্থে আমাদের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়াও শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদাহ জেলাজুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এই ধরনের বাসিন্দার সংখ্যা রয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি।
বিএসএফের তথ্য অনুযায়ী, এই সমস্ত জেলার ৫৪টি গ্রামের ৪ হাজার ৭৪৯টি বাড়িতে এই মানুষজন বসবাস করেন। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ নো-ম্যানস ল্যান্ডে ওই বাড়িগুলো অবস্থিত হওয়ায় সঠিক নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। ফলে ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালানের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার রত্নেশ কুমার জানান, ওই সমস্ত অঞ্চলে দুই দেশের মানুষের চালচলন এবং কথাবার্তার ধরন প্রায় এক হওয়ায় অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়। ফলে এই মানুষগুলোকে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাইরে রাখায় অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের ইন্সপেক্টর জেনারেল (সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার) সন্দীপ সালুঙ্কে বলেন, জীবনের সব পুঁজি দিয়ে ওখানে ঘরবাড়ি করে ফেলায় তাঁরা কেউই ওই জমি ছাড়তে রাজি নয়। তাই স্থলসীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে এই কয়েকটা গ্রামকে স্থলসীমান্ত চুক্তির আওতায় আনা হলে সবচেয়ে ভালো হতো।