নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে শ্রমিকদের দমন-পীড়ন

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া

২০১৩ সালে বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা (রানা প্লাজা) ধসে পড়ে এক হাজার ১০০ এর অধিক মানুষ মারা যাওয়ার পর বৈশ্বিক চাপের মুখে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়াও এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাধ্য হয়েছে শ্রম আইন সংশোধন করতে। কিন্তু তারপরও পশ্চিমা গ্রাহকদের এটা ভাবা ভুল হবে যে,বাংলাদেশে এখন নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে পোশাক তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর নির্মম দমন-পীড়নের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে,বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত নিম্ন মজুরিতে শ্রমিকদের দিয়ে পোশাক তৈরি করানো হচ্ছে।

কাজের পরিবেশ এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত বছরের ডিসেম্বরে উইন্ডি কারখানায় বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এরপর সেই বিক্ষোভ আরো কয়েক ডজন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে কারখানার মালিকরা ১৫০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করে। সেসব কারখানার মালিকরা, যারা এইচ অ্যান্ড এম,জিএপি,ওয়ালমার্ট,সি অ্যান্ড এ,অ্যাবেরক্রমবাই,ফিচ এবং টমি হিলফিগারের মতো ব্যান্ডের পোশাক তৈরি করেন, তারা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ জন শ্রমিক নেতাসহ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে,এটা সত্য যে ২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজার পোশাকতৈরি কারখানার মধ্যে গত বছর পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ কারখানা ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনভুক্ত ছিল। মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ২০১৩ সাল থেকে ঘণ্টায় যে ৩২ সেন্ট দেওয়া হতো, সেটার আর বৃদ্ধি হয়নি। 

আসলে এই দমন-পীড়ন পরিস্কারভাবেই শ্রমিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য এবং বাংলাদেশকে একটি নিম্ন বেতনের দেশ হিসেবে রাখার জন্য। বাংলাদশের রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮০ভাগ আসে এই খাত থেকে। কিন্তু তারপরও এটি পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশকে কম আকর্ষণীয় করে তুলেছে। গত সপ্তাহে আমেরিকান অ্যাপারেল এবং ফুটওয়ার অ্যাসোসিয়েশন শেখ হাসিনার সরকারকে ‘একটি নিয়মিত ও স্বচ্ছ মজুরি প্রক্রিয়া পর্যালোচনার’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা ততদিন পর্যন্ত উন্নতি করতে পারবেন না,যতদিন না পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতারা সরবরাহকারীদেরকে কম খরচে কাজ তোলার চাপ দেওয়া বন্ধ না করবেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সে দিক থেকে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে এ বিষয়ে সাহায্য করার।২০১৩ সালে ভবন ধসে পড়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি স্থায়ী চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আওতায় রয়েছে শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, দরকষাকষির অধিকার এমনকি দায়িত্বপূর্ণ ব্যবসা পরিচালনার মতো বিষয়। কিন্তু গার্মেন্ট শিল্প এবং সরকার এ নীতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় তা গার্মেন্ট শিল্পকে কলঙ্কিত করেছে,আর দেশের অর্থনীতিকে ঠেলে দিয়েছে হুমকির মুখে।