ছিটমহলে উচ্ছ্বাস

Looks like you've blocked notifications!
নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের খুশিতে ভারতের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ছিটমহলগুলোতে এভাবেই ছোট ছোট আনন্দ মিছিল বের করা হয়। ছবিটি কোচবিহারের দিনহাটা মহাকুমার কিসামত বাত্রিগাছ ছিটমহল থেকে তোলা। ছবি : হায়দার আলী বাবু

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার বুকে পা রাখতেই বাঁধভাঙা উচ্ছাসে মেতে উঠেছেন দুই দেশের ভেতরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার মানুষ।  আজ শনিবার সকালে মোদি বাংলাদেশে আসার পর থেকেই উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে ছিটমহলগুলোতে।

দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষ এখন নতুন আশায় বুক বাঁধছেন। শেখ হাসিনা আর নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই নাগরিকত্বের অধিকার পাবেন ৫১ হাজার মানুষ। স্বপ্নপূরনের আশা এখন ছিটমহলবাসীর চোখে-মুখে।

ভারতে যেতে ইচ্ছুক ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্বের বিষয়ে এখন রীতিমতো তোড়জোড় চলছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য চলছে নানা তৎপরতা।  ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় ছিটের সংখ্যা ১১১টি। যেখানে বাসিন্দার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন। অন্যদিকে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের ছিটের সংখ্যা ৫১টি। যেখানে বসবাস করেন ১৪ হাজার ২১৫ জন বাসিন্দা।

ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসনের জন্য ভারত সরকারের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। তবে ২০১১ সালের ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জনগণনা অনুযায়ী, ভারতে যেতে ইচ্ছুক ছিটমহলের পরিবার পিছু পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্ত সে ক্ষেত্রে গোটা পরিবার ভারতের নাগরিকত্ব না নিলে এই পুনর্বাসন প্যাকেজ পাবে না। 

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এমন অনেক ছিট আছে যেগুলো ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে দুই দেশের মধ্যেই অবস্থিত। সেসব ছিটের বাসিন্দারা যে দেশে বসবাস করতে চাইবে, তাঁদের সেই দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনের জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিটি পরিবারকে আগামী ১০ বছরের জন্য ব্যাংকে দুই লাখ টাকা করে স্থায়ী আমানত দেওয়া হবে। মাসিক আয় প্রকল্পে সেই আমানত থেকে নিয়মিতভাবে টাকা পাবে প্রতিটি পরিবার। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের নিজভূমে নিজগৃহ প্রকল্পে তিন কাঠা জমির ওপর প্রতিটি পরিবারকে ৭০০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রেও ছিটমহলের পরিবারগুলো অগ্রাধিকার পাবে।

 ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে পূরণ করে এই চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে এত দিন ধরে রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকা প্রায় ৫১ হাজার মানুষ তাদের নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। যা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।’

আজ সকাল থেকে ভারত-বাংলাদেশের পতাকা হাতে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা এখন শুধু প্রহর গুনছেন নাগরিকত্ব আর নাগরিক সেবা পাওয়ার প্রতীক্ষায়।