এ যুগের আদু ভাই
সপ্তম শ্রেণি পাস করতে আদু ভাইয়ের চেষ্টার কথা সর্বজনবিদিত। গল্পের আদু ভাই বারবার চেষ্টা করেও অষ্টম শ্রেণিতে প্রবেশাধিকার পাচ্ছিলেন না। শেষে পাস করতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধে বউয়ের হুমকির পর প্রাণপণ চেষ্টা করে প্রমোশন পেয়েছিলেন ছেলের সঙ্গে। স্বীকৃতিও মিলেছিল। কিন্তু অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মারা যান। ফলে অষ্টম শ্রেণিতে আর পড়া হয়নি তাঁর।
বাস্তবের আদু ভাই শিবচরণ যাদব। বয়স ৮১। বাসস্থান ভারতের রাজস্থান রাজ্যের আলওয়ার জেলায়। দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পরীক্ষা দিয়েছেন ৪৬ বার। তবে গল্পের আদু ভাইয়ের মতো পাস জোটেনি তাঁর ভাগ্যে।
দ্য মেইল অনলাইনের খবরে বলা হয়, রাজস্থান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার নিয়ে ৪৬ বারের মতো দশম শ্রেণির পরীক্ষায় বসেন শিবচরণ। গত বুধবার প্রকাশিত ফল থেকে জানা যায়, এ যাত্রায়ও কৃতকার্য হতে পারেননি তিনি। তবে গত বছর সব বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও এবার একটি বিষয়ে পাস করতে পেরেছেন। সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষায় তিনি ৩৪ নম্বর পেয়েছেন। গত বছর একই পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি শূন্য পেয়েছিলেন। এ বছর অন্যান্য বিষয়ে তাঁর নম্বর উল্লেখ করার মতো নয়। তিনি হিন্দিতে পেয়েছেন ৩, ইংরেজিতে শূন্য, গণিতে ৯ ও সংস্কৃতে ৭। এর আগের বছর হিন্দিতে ২৭, ইংরেজিতে ৪, সামাজিক বিজ্ঞানে শূন্য, গণিতে ৮ ও সংস্কৃতে ৭ পেয়েছিলেন। কিন্তু এমন কীর্তির পরও আলওয়ার জেলার বেহরর শহরে সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মূল আকর্ষণ ছিলেন এই অশীতিপর বৃদ্ধ। এ বছর নিজ গ্রাম কোহরি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যান তিনি।
বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও পরীক্ষা দেন কেন—জানতে চাইলে শিবচরণ ডেইলি মেইলকে বলেন, যৌবনে করা শপথ রক্ষা করতেই তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কী এমন ছিল তাঁর শপথে? উত্তরে শিবচরণ বলেন, দশম শ্রেণি পাস না করলে তিনি বিয়ে করবেন না। কিন্তু দশম শ্রেণি পাস হয়নি; বিয়েও হয়নি। তাই এই বৃথা চেষ্টা করে লাভ কী?
সাবলীল ভাষায় শিবচরণ ওরফে শিওরাম বলেন, ‘আব সাদি কা চান্স তো হ্যায় নেহি, ইসলিয়ে আব বিশওয়া রেকর্ড ম্যায় আপনা নাম দারজ কারণেকে লিয়ে পারিকষা দে রাহা হু (এখন বিয়ের সুযোগ নেই, তাই আমি বিশ্বরেকর্ড গড়ার চেষ্টা করছি।’
পরীক্ষা পাসে প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়ে শিবচরণ বলেন, ‘এবার আমি প্রচুর খেটেছি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখার ক্ষমতা ও গতি দুটোই কমছে। দৃষ্টিশক্তি কমার কারণে এমনটা হচ্ছে। উত্তর জানা থাকার পরও লিখতে পারছি না।’
জীবন-সায়াহ্নে এসে শিবচরণ থাকেন গ্রামের একটি মন্দিরে। তাঁর পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। এরই মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ওঠার অদম্য সাধনা করে যাচ্ছেন।
৮১ বছরের এই উচ্ছ্ল প্রাণ আগামী বছরও পরীক্ষা দিতে চান। ইচ্ছাটাকে শান দিয়ে বলেন, ‘আগামী বছর আরো কঠিন পরিশ্রম করব।’