যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশের বড় সমস্যা

Looks like you've blocked notifications!

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, অনলাইনে মতপ্রকাশ, সংবাদমাধ্যমের ওপর কিছু বিধিনিষেধ, শোচনীয় কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি মানবাধিকার সমস্যা। বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস ফর-২০১৪’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রাণবন্ত সুশীল সমাজসহ বহুত্ববাদী সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ। ৫ জানুয়ারির (২০১৩) নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার আগে দেশটিতে কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা ও বিক্ষোভ চলে। বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও এর মিত্র দলগুলো নির্বাচন বয়কট করার পর তারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারের গঠন নিয়ে ধারাবাহিক সহিংস ধর্মঘটে যুক্ত হয়, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বেশির ভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এ নির্বাচনকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করে, বিরোধীরা বয়কট করায় এ নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়নি বলেও জানায় তারা। সে সময় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতেও ব্যর্থ হয়েছিল।

অন্যান্য মানবাধিকার সমস্যা হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতন, বিস্তৃত পরিসরে সরকারি দুর্নীতি, যথেচ্ছ গ্রেপ্তার ও আটক, বিচার বিভাগের দুর্বল সামর্থ্য ও স্বাধীনতা, বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটককে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দলীয় অন্তর্কোন্দল সাংঘাতিক সমস্যা। কিছু বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) প্রতিনিয়ত আইনি ও অনানুষ্ঠানিক বিধিনিষেধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিরোধী দলগুলোর কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিচারে কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সরকার কেবল রাজনৈতিক কারণেই ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করছে না।

প্রতিবেদনে নারী বৈষম্য ও শিশু অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীরা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখনো ঘটছে। অনেক শিশুকে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নারী ও শিশু পাচারের মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সমস্যায় পড়তে হয়।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যদিও সরকারি ও সুশীল সমাজের অনেক নেতার মতে, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই ঘটছে, এ জন্য সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস দায়ী নয়। ভিন্ন যৌন-পরিচয় থাকা ব্যক্তি বৈষম্যের শিকার হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে; কিন্তু সরকার মাঝেমধ্যে এই অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। তবে মতপ্রকাশের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং হয়রানি ও ভর্ৎসনার ভয়ে সাংবাদিকরা সরকারের সমালোচনা স্ব-নিয়ন্ত্রণ করে।

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ জন নিখোঁজ হয়, ২০১৩ সালে যা ছিল ১৪ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে গুম হয়েছে ৮০ জন, ২০১৩ সালে হয়েছে ৫৩ জন।