‘ট্রাম্প আল্লাহর বান্দা’

Looks like you've blocked notifications!

রাষ্ট্রীয় সফরে এই মুহূর্তে সৌদি আরব অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই সফর নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

নির্বাচনী প্রচারের সময় মুসলিমবিরোধী বক্তব্য, ক্ষমতায় বসার কয়েকদিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সাত মুসলিম দেশের জনগণের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, আবার সেই ট্রাম্পই প্রথম বিদেশ সফরে একটি মুসলিম দেশে আসা এবং ইসলামবিষয়ক বক্তব্য দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে  বেশ আলোচনা হচ্ছে। মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি করেছে ট্রাম্পের এই সফর।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এই মুহূর্তে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প।

সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর নিয়ে যখন নানা ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছেন তখন আরবের বহু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। টুইট করে তাঁরা জানাচ্ছেন বহুল আলোচিত এই সফর নিয়ে তাঁদের সন্দেহের কথাও।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। ট্রাম্পকন্যাকে নিয়েও আলোচনা আছে।

অনেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ব্যঙ্গও করছেন, ইসলাম সম্পর্কে তাঁর করা কটূক্তির প্রসঙ্গ টেনে পোস্ট করছেন ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি করা একটি ব্যঙ্গচিত্র এই মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি।

ছবির সঙ্গে দেওয়া শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘সৌদি ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়া : ট্রাম্প হচ্ছেন আল্লাহর একজন দূত।’

সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতা সাদ বিন ঘনিম গত মাসে দেওয়া একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ওহ আল্লাহ, ট্রাম্প হচ্ছে আপনার বান্দাদের একজন। তাঁর ভাগ্য আপনার হাতে। তাঁকে আদেশ দিন যাতে, তিনি চান আর না চান, মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করেন এবং তাদের ওপর নিপীড়ন যাতে বন্ধ হয় সে জন্য যাতে তিনি কাজ করেন। তাঁর শয়তানের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন এবং তাঁকে আপনার পথে পরিচালিত করুন।’

যদিও পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তখন অনেকে সেটির স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছিলেন। যেটি বর্তমানে অনেকে পোস্ট করেছেন।

টুইটারে ট্রাম্পকে নিয়ে করা আরেক কার্টুনও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য  ট্রাম্প এবং সৌদি নেতাদের দায়ী করা হচ্ছে।

কার্টুনটিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প যখন বিমান থেকে নেমে আসছেন তখন সৌদি বাদশাহ, তাঁর ছেলে এবং ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

লাল গালিচার একপাশে পড়ে আছে ইয়েমেনিদের মৃতদেহ। আর অন্য পাশে মাথা নত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যদের পেছনে বোরকা পরিহিত একজন নারী হাঁটু মুড়ে বসে আছেন এবং তাঁর পেছনে তলোয়ার হাতে শিরশ্ছেদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি।

এই কার্টুনের নিচে অনেকে মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘সাতটি আরব দেশের মুসলমানদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সৌদি আরবের বাদশাহ তাঁকে স্বাগত জানাতে ১৭টি মুসলিম দেশের নেতাদের জড়ো করেছেন।’  

এই সফরকে কেন্দ্র করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সৌদি ছাত্র খালেদ আল-দাওসারির কথাও তুলে ধরছেন। মার্কিন স্থাপনায় হামলার চেষ্টা করার অভিযোগে তাঁকে এই সাজা দেওয়া হয়।

তাঁর মুক্তির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে এমন একটি অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা একটি ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প এবং সৌদি বাদশাহ সালমান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর নিচে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে: ‘ওহ জাতি, তোমাদের একজন ছেলে আরেক দেশের কারাগারে মরছে। এখনই তাঁর মুক্তি চাওয়ার সময়।’

আবার অনেকেই ট্রাম্পের এই সফর সৌদি আরবের জন্য গর্ব করার মতো ঘটনা বলতে চেয়েছেন।

আরেকজন লিখেছেন, ‘সারা পৃথিবীর চোখ এখন রিয়াদের দিকে। সবাই তাকিয়ে আছেন এই সম্মেলনের সাফল্যের দিকে।’

সৌদির রাজধানী রিয়াদে গতকাল রোববার আরব-ইসলামিক অ্যামেরিকান এক সম্মেলনে ভাষণ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটা ভালো ও মন্দের মধ্যে যুদ্ধ।’

বক্তৃতায় ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধটা বিভিন্ন বিশ্বাস, দল বা সভ্যতার মধ্যে নয়। এটা ওইসব নিষ্ঠুর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ, যারা মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। এ ছাড়া তাদের রক্ষা করতে যাওয়া মানুষদের জীবনও কেড়ে নেয়, তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন।’

ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুসলিমরাই সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ইসলামকে বিশ্বের অন্যতম মহান একটি বিশ্বাস বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ইসলামী চরমপন্থীরা ‘শয়তানের সৈনিক’ এবং ইসলামে তাদের কোনো বৈধতা নেই। তাদের এই কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলামী মতাদর্শ থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর ধ্যান-ধারণা যে অনেক আলাদা তা বোঝা যায়।

সন্ত্রাস দমনে মুসলিম দেশগুলোকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের বের করে দিন। সন্ত্রাসীদের বের করে দিন। চরমপন্থীদের বের করে দিন। আপনাদের প্রার্থনাস্থল থেকে তাদের বের করে দিন। আপনাদের সম্প্রদায় থেকে তাদের বের করে দিন। আপনাদের পবিত্র ভূমি, এমনকি পৃথিবী থেকে তাদের বের করে দিন।’ সন্ত্রাসবাদের শিকার সম্প্রদায়ের মধ্যে ৯৫ শতাংশেরও বেশি মুসলিম বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের জন্য, তাদের দেশের জন্য, তাদের সন্তানদের জন্য কেমন ভবিষ্যৎ চায় তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাদের ‘আমেরিকান শক্তির’ অপেক্ষা করে থাকলে হবে না-যোগ করেন ট্রাম্প।