আগামী নির্বাচনে অংশ নিন, বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, হত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির রাজনীতি বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিন।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুইডেনের স্টকহোমে সিটি কনফারেন্স সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা চাই তারা (বিএনপি) পুনরায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার মতো ভুল না করুক। বরং আমরা চাই তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং জনগণ বিচার করবে কারা ক্ষমতায় আসবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দেশের কোনো উন্নয়নে স্বস্তিবোধ করেন না এবং তিনি সর্বদা দেশের ধ্বংস দেখতে চান, উন্নয়ন নয়।
বাংলাদেশ খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার এই মন্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না বরং যারা এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, যারা মামলার মুখোমুখি হতে ভয় পায় এবং দেড়শবার রিট দাখিল সত্ত্বেও উচ্চ আদালতে মামলায় হেরেছে তাদেরই দুর্দিন যাচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের মানুষ যখন ভালো থাকে বিএনপি নেতা তখন স্বস্তি অনুভব করেন না। তাঁরা স্বস্তি অনুভব করেন যখন তাঁরা লোকদের হত্যা করেন এবং দেশের সম্পদ ধ্বংস করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন হাওয়া ভবন খুলে জনসাধারণের অর্থ লুট করেছে এবং অবাধে দুর্নীতি করেছে। খালেদা জিয়া শুধু লুট ও কমিশন নেওয়া জানেন এবং তাঁরা কেবলমাত্র জানে কীভাবে সম্পদ ধ্বংস করতে হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুনরায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি নেতারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবননাশের কয়েকবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি রাজনীতি, দেশ এবং জনগণের স্বার্থে এই ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএনপি হত্যা ছাড়া অন্য কিছুই বোঝে না এবং ধ্বংসের বাইরে কোনো কিছুই জানে না। দেশবাসীর ওপর বিএনপি যে নির্যাতন চালিয়েছে, জনগণ তা ভুলবে না।’
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের সামনে বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে অবহিত করতে হবে যে বিএনপি একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। জনগণের সামনে তাদের চরিত্রকে উন্মোচিত করতে হবে।’
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরোধী সরকারের প্রচার কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীরা দেশের কোথাও স্থান পাবে না। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এই ধর্ম কখনো নিরীহ মানুষ হত্যার সমর্থন দেয় না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অভিযানে যখন কোনো জঙ্গি নিহত হয় বিএনপি চেয়ারপারসন মায়া কান্না করেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের তহবিল বন্ধে ভূমিকা রাখা, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ হারানোর পরে ফোন করে হিলারি ক্লিনটনকে প্ররোচিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার হুমকি দেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান শেখ হাসিনা।
গত আট বছরে দেশের অসামান্য উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ এখন সাধারণ মানুষের হাতে হাতে এবং তারা দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল কম। তারা জনগণকে বিদ্যুতের খাম্বা দিয়েছে। বিদ্যুৎ দিতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সাহায্য তহবিল লুট করেছে, তারা জনগণকে দরিদ্র রাখতে চেয়েছে এবং তারা দেশকে দুর্দশাগ্রস্ত ও মানুষের মৃতদেহ দেখিয়ে আরো বিদেশি সাহায্য নিয়ে আসতে চেয়েছে। তিনি বলেন, অপরদিকে আওয়ামী লীগের নীতি হলো দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো, অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা গ্রহণ নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা মর্যাদার সঙ্গে বাস করব।’ প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি সুইডিশ রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।