গো-রক্ষার নামে মোদির জমানায় ২৩ খুন

Looks like you've blocked notifications!

গো-ভক্তির নামে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। গো-রক্ষার নামে একটি গোষ্ঠী ঘটিয়ে চলেছে হত্যা-ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার গাড়িতে গো-মাংস বহন করার অভিযোগ এনে ঝাড়খন্ড রাজ্যে এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এর তিন দিন আগে ঝাড়খন্ডের দেওরিতে উসমান আনসারি নামের এক ব্যক্তির বাড়ির বাইরে মরা গরু পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তির বাড়িতে।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ঈদের বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে এক কিশোরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

গণমাধ্যমে উঠে আসা খবর অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ৩২টি। আর এসব হামলায় নারী-শিশুসহ ২৩ জন নিহত হয়েছেন।

তবে এসব ঘটনাকে রক্ষণশীল মনোভাব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কারণ এসবের বেশির ভাগ ঘটনাই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে স্থান পায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরু হত্যা, চোরাচালান ও গো-মাংস খাওয়ার অভিযোগ এসে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সম্প্রতি হরিয়ানা রাজ্যে দুই তরুণীকে গণধর্ষণ ও তাদের দুই আত্মীয়কে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। গো-ভক্তির নামে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। গো-রক্ষার নামে এই সহিংসতা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে।

গো-রক্ষার নামে ২০১৪ সালের জুন এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এ ধরনের ১১টি ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে তা বেড়ে ১২টি এবং ২০১৭ সালের এই ছয় মাসেই নয়টি ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে ভারতের উত্তরাঞ্চলে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মোট এক হাজার ৪৫৪টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৮৩ জন মানুষ নিহত ও চার হাজার ৫৮৫ জন আহত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গো-রক্ষকদের এই উন্মত্ত জনতা নজিরবিহীন বর্বরতা চালাচ্ছে। মূলত দেশটির দলিত ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকজন গো-রক্ষকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

২০১৬ সালের মার্চে এনায়েতুল্লা নামের ১২ বছর বয়সী এক বালক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গরু ব্যবসায়ী সন্দেহে গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন, হরিয়ানার মিওয়াতে ২০ বছর বয়সী খালাতো বোনের সঙ্গে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে বাড়ির মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

ওই কিশোরী তখন জানায়, ধর্ষণকারীরা তাকে বলেছে গো-মাংস খাওয়ার জন্য তার এই শাস্তি।

বেশির ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা গরু হত্যা, মাংস খাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন, কিন্তু তারপরও কোনো লাভ হয়নি।

ইন্ডিয়াস্পেন্ড বলছে, এসব ঘটনায় রাজ্য সরকার কিছু অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু সেটাও গোলমাল সৃষ্টি হওয়ার পর।

গো-ভক্তির নামে অমুসলিমদের ওপর ২৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর এসব হামলা চালিয়েছে খোদ গো-রক্ষক দাবিকারী গোষ্ঠী-ইন্ডিয়াস্পেন্ডের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।