দ্বিতীয় দিনেও উৎসবের মেজাজে চলছে ছিটমহলে মাথা গোনা
ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে উৎসবের মেজাজে চলছে মাথা গোনার কাজ। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো দুই দেশের ছিটমহরগুলোতে এই কাজ চলছে। গত সোমবার সকাল থেকেই দুই দেশের যৌথ গণনাকারী দলের সদস্যরা ছিটমহলের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যাম্প করে ছিটের বাসিন্দাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন।
প্রথম দিন থেকেই ছিটের বাসিন্দারা উৎসব মুখর পরিবেশে মাথা গোনার কাজে অংশ নেয়। আর ছিটমহলের বাসিন্দাদের সব রকমের সহায়তা দিতে প্রথম দিন থেকেই মাঠে তৎপর ছিলেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদস্যদরা।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সোমবার দিন শেষে মাথা গণনার কাজে ছিটের বাসিন্দাদের ক্যাম্পে উপস্থিতির হার ছিল ১৬ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে আজ দিন শেষে গণনা ৪০ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে তাঁরা আশা করেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছিটবাসী ও সেবাকেন্দ্রে থাকা প্রসূতি মায়েদের হয়ে দুই দেশের যৌথ গণনাকারী কর্মকর্তাদের কাছে দরখাস্ত জমা দেন সমন্বয় কমিটির সদস্যারা। এ ছাড়া অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধদের গণনার ক্যাম্পে আনায়ও সহায়তা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
সোমবার দিন শেষে ছিটমহলের মাথা গণনা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার প্রশাসক পি উলগনাথন বলেন, প্রথম দিন গণনার কাজ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। দুই দেশের মোট ৭৫টি দল এই গণনার কাজে যুক্ত ছিল। ভারত ও বাংলাদেশের তরফে একজন করে গণনা প্রতিনিধি রয়েছেন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন দুজন সশস্ত্র কনস্টেবল, চারজন বিএসএফ জওয়ান, একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ২০১১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি করে এবার ছিটবাসীর মাথা গণনা চলে। ২০১১ সালের জনগণনায় বাদ পড়া ছিটমহলের প্রায় দুই হাজার মানুষকে এবার নতুন করে গণনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবি তুলেছে ছিটমহল সংগ্রাম কমিটি। সংগঠনটির দাবি, নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ভূখণ্ড, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে বিতাড়িত হওয়ায় বা কর্মসূত্রে বাইরে থাকায় ২০১১ সালের জনগণনায় সরকারি নথিতে অনেকের নাম নেই। আজ ছিটমহলে মাথা গণনার সময় তাঁদের নাম তোলার দাবি ওঠে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২ টি ছিটমহলে জনসংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৫৪৯ জন। যারমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলে জনসংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন। আর ভারতে অবস্থিত ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলে জনসংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২১৫ জন। তবে ভারতে অবস্থিত ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের ২০টি জনবসতিশূন্য। একইভাবে বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের ৪৩টি ছিটমহলে কোনো জনবসতি নেই। আর এসব খালি জমি দখলের জন্য বরাবরই তৎপর দুই দেশের ভূমিদস্যুরা। এসব জমি ৩১ জুলাই ছিটমহল হস্তান্তরের পর দুই দেশের সরকারের আওতায় চলে যাবে।
২০১১ সালের জনগণনার পর দুই দেশের ছিটমহলের ফাঁকা জমি দখলের লোভে এক শ্রেণির সুবিধাবাদীদের ভিড় বেড়েছে। দুই দেশের ছিটমহলে ২০১১ সালের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপক আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে প্রথম দিন থেকেই সতর্ক রয়েছেন দুই দেশের যৌথ গণনাকারীরা।