হনুমানকে খাবার খাওয়ালেই কারাবাস!
রামভক্ত হনুমান নিয়ে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা যতই সংবেদনশীল হোন না কেন, এবার সেই রামভক্তের ওপর জারি হতে চলেছে আইনি নিষেধাজ্ঞা। ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের সরকার এখন থেকে হনুমানের ওপর রীতিমতো নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। কেউ হনুমানকে ছোলা, বাদাম, কলা কিংবা এ জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ালেই সোজা তাকে পাঠানো হবে জেলহাজতে।
ভারতের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন মেনে বৃহস্পতিবার এমন শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে উত্তরাখন্ড সরকার। হনুমানের উৎপাত কমাতেই নাকি এই আজব সিদ্ধান্ত! বৃহস্পতিবার উত্তরাখন্ডের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বন্য প্রাণী দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেন উত্তরাখন্ডের হরিশ রাওয়াত সরকার।
মূলত হনুমানের বংশবিস্তার নিয়ে বিপাকে স্থানীয় সরকার। পথে-ঘাটে, মন্দিরে, বাড়িতে—প্রায় সব জায়গাতেই দিনে-রাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নানা আকৃতির হনুমানের দল। এগুলোর উৎপাতে সাধারণ মানুষেরও নাজেহাল দশা। এগুলোকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে প্রশাসনও।
এ অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে একশ্রেণির পুণ্যার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ মন্দিরে-লোকালয়ে যেখানেই ‘রামভক্ত’দের দেখা পাচ্ছেন, সেখানেই ফলমূল ও খাবার-দাবার বিলিয়ে চলেছেন। খাবার পেয়ে হনুমান-সাম্রাজ্য বিস্তৃত হচ্ছে, সঙ্গে সাহসও বাড়ছে হনুমানের! পথে-ঘাটে-বাজারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নানা দ্রব্য কেড়ে, ছিনিয়ে পালাচ্ছে হনুমানের দল। এমনকি ফাঁকতাল বুঝে কোলের শিশুদের নিয়েও গাছের মগডালে উঠে যাচ্ছে বুড়ো হনুমানের ফল। পিছু ধাওয়া দিলে বিনিময়ে জুটছে দাঁত খিচুনি। অগত্যা বাচ্চাকে ফিরে পেতে আকুতি-মিনতি আর খাবারের লোভ দেখিয়ে দিনের সিংহভাগ সময় হনুমানের পেছনে ব্যয় করে অবশেষে হনুমানের দয়ায় কোলের বাচ্চা ফিরে পাচ্ছেন মা। প্রায়ই ঘটছে এমন ঘটনা-দুর্ঘটনা।
এ অবস্থায় হনুমানের উৎপাত কমাতে অগত্যা উত্তরাখন্ড সরকার সাধারণ মানুষের ওপর এই শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত মন্দিরে বা লোকালয়ে সাধারণ মানুষ যাতে হনুমানকে খাবার না দেন, সে আবেদনও জানিয়েছেন। খাবারের লোভে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হনুমানের উপদ্রব ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, হনুমানকে যত্রতত্র খাবার দেওয়ার কারণে তারা এখন আর মানুষকে তোয়াক্কার মধ্যে আনছে না। ফলে এই রীতি বন্ধ করলে হনুমানের উপদ্রব অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরাও।