অদম্য বিমান-কারিগর

Looks like you've blocked notifications!
বাড়িতে নিজের হাতে বিমান তৈরি করেছেন দক্ষিণ সুদানের যুবক জর্জ মেল। ছবি : বিবিসি।

বাল্যকাল থেকেই  বিমান ওড়ানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। পাইলট হয়ে বিমান ওড়ানোর ইচ্ছেও পূরণ করতে পারেননি। তবু হাল ছাড়েননি দক্ষিণ সুদানের যুবক জর্জ মেল। পাইলট হওয়ার বদলে নিজের বাড়িতেই তৈরি করেছেন বিমান। আর মেলের এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে চাকরি দিয়েছে দক্ষিণ সুদানের বিমানবাহিনী।   

দক্ষিণ সুদানের জুবায় বসবাসকারী ২৩ বছর বয়সী জর্জ মেল বিবিসিকে জীবন ও নিজ বাড়িতে বিমান তৈরির গল্প বলেন। 

ছোটকালে শরীরে পাখা লাগিয়ে ওড়ার চেষ্টা করেন মেল। পাখা তৈরি করেন বড় কাপড় আর ধাতব দণ্ড দিয়ে। গায়ে লাগিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাড়ির ছাদ থেকে। পাখির মতো ওড়ার বদলে সরাসরি ভূপাতিত। পা দুটো প্রায় ভেঙেই গিয়েছিল তাঁর। 

ব্যর্থতাকে প্রেরণা হিসেবে নেন মেল। বিভিন্নভাবে বিমানের গঠন ও পরিচালনবিদ্যা জানার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। ২০১১ সালে উগান্ডার একটি হাইস্কুল থেকে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুতে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। দক্ষিণ সুদানের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। গতানুগতিক পড়াশোনা বন্ধ হলেও বিমান নিয়ে শেখায় কোনো ছেদ পড়েনি তাঁর। 

মেল বলেন, গতানুগতিক পড়াশোনা ছাড়ার কারণে তিনি বিমান নিয়ে আরো পড়াশোনার সুযোগ পান। বিমান নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনাগুলোর ব্যবহারিক করেন তিনি। জুবার বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে তিনি বিমান তৈরির বিভিন্ন বস্তু জোগাড় করেন। বিমানের কাঠামো তৈরির জন্য জোগাড় করেন অ্যালুমিনিয়াম আর দুটি পেট্রল ইঞ্জিন। বিমানে পাইলটের আসন তৈরিতে মেল ব্যবহার করেন বাগানে বসার চেয়ার। বই আর ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য দিয়ে তিনি বিমান তৈরি করে ফেলেন। 

২০১৩ সালে দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধ চলাকালেও বিমান তৈরির কাজে মেলের কোনো ছেদ পড়েনি। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও মেল নিজের বাড়ির মধ্যেই ছিলেন। মেলের ঘরই বিমান তৈরির কারখানা ও হ্যাঙ্গার (বিমান রাখার স্থান)। সারা ঘরেই বিমানের টুকরো টুকরো অংশ ছড়ানো। এই ঘরেই তাঁর খাওয়া, ঘুম সবকিছু। 

আফ্রিকার স্বল্পোন্নত দেশের আর আট-দশটি পরিবারের মতোই জর্জ মেলের বিমান বানানোর ইচ্ছাকে ভালোভাবে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। তাঁদের দৃষ্টিতে মেলের এই কাজ সময় ও অর্থ নষ্ট করা ছাড়া কিছুই নয়। মেল বিমানের যন্ত্রাংশগুলো চুপিসারে ঘরের মধ্যে নিয়ে যেত। তবে বিমানবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার পর মেলের কাজের প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যায়। 

দক্ষিণ সুদানের বিমানবাহিনী মেলের কাজে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে কাজ দেয়। তবে এখনো পর্যন্ত মেলের বিমান ওড়ার অনুমতি দেয়নি তারা। 

মেলের তৈরি বিমানের লেজে আঁকা দক্ষিণ সুদানের পতাকা। নিজের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে মেলে মনোভাব ইতিবাচক। তিনি বলেন, আগে যাই ঘটুক এখন দেশ এগিয়ে চলছে। ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। আর দেশের ভবিষ্যৎ হলো যুবক সমাজ।

বর্তমানে মেলের ইচ্ছা বিদেশে বিমান প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করা।  পরে কৃষিকাজে সহায়ক হতে পারে এমন মনুষ্যবিহীন বিমান বা ড্রোন বানানো।