কোমল পানীয় পানে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে
বেশির ভাগ কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এসব পানীয় পানে মানুষের শরীরের বিপাক পক্রিয়ায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে যকৃত, অগ্নাশয়সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি দেখা দেয়। ভারতসহ উপমহাদেশে অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ পানীয় পানের হার বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
ভারতীয়দের খাবারের প্লেটে গুড়, লাড্ডুসহ দেশের ঐতিহ্যগত সব মিষ্টির স্থান দখল করে নিয়েছে এনার্জি ড্রিংকসহ অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ অস্বাস্থ্যকর সব পানীয়। এতে ভারতীয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কারণ বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ও বিকলঙ্গতার জন্য অনেকসময়ই অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ এসব পানীয়কে দায়ী করা হয়।
ভারতের ডায়াবেটিকস ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার অব নিউট্রিশন ও মেটাবলিক রিসার্চের এক গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৯৮ সালে দেশটিতে বার্ষিক মাথাপিছু চিনিসমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণের পরিমাণ ছিল দুই লিটার। ২০১৪ সালে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লিটার। অর্থ্যাৎ, ১৬ বছরে পানীয় পানের মাথাপিছু বেড়েছে মাথাপিছু ৯ লিটার।
সম্প্রতি ‘সার্কুলেশন’ বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধের সঙ্গে ভারতীয়দের চিনিসমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি যোগ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়াবহতার বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, সোডা, ফলের জুস, এনার্জি ড্রিংকসসহ বিভিন্ন চিনিসমৃদ্ধ পানীয়র কারণে প্রতিবছর এক লাখ ৮৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
ভারতীয় গবেষকরা জানান, চিনিসমৃদ্ধ পানীয় ছাড়াও দেশটির মানুষের খাদ্য তালিকায় আছে মিল্কশেক, ঘোল, লাচ্ছির মতো উচ্চ ক্যালরির খাবার। এসব খাবার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ায়।
ভারতীয় গবেষণায় দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশটির ঐহিত্যগত মিষ্টি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত পুষ্টিগুণসম্পন্ন চিনির ব্যবহার ২০০১ সালে দেশটিতে মাথাপিছু ছিল আট দশমিক ৭২ কেজি। ২০১১ সালে এই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় পাঁচ কেজি।
ভারতের ডায়াবেটিকস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, চিনিসমৃদ্ধ অস্বাস্থ্যকর পানীয় শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই এই পানীয় গ্রহণের হার বেড়েছে। শিশুদের মধ্যে মিষ্টির ধরনের পরিবর্তন ঘটছে বেশ দ্রুত। ভয়ের বিষয় হলো, চিনিসমৃদ্ধ পানীয় ও অন্যান্য খাবার বিদ্যালয়ের কাছাকাছি সহজেই পাওয়া যায়।
ভারতীয় গবেষণায় বলা হয়, শিশুদের খাবার গ্রহণে মায়েদের বেশ ভূমিকা থাকে। মায়েরা অনেক ক্ষেত্রেই ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার বলতে ‘স্বাস্থ্যকর’ পরিবেশে তৈরি খাবার বুঝান। এই পরিপ্রেক্ষিতে মায়েরা রেস্টুরেন্টের খাবারের চেয়ে প্যাকেটজাত খাবার ও বোতলজাত কোমল পানীয়কে প্রধান্য দেন। কোমল পানীয়র চিনির ব্যাপারটি অনেকক্ষেত্রেই মায়েদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।
গবেষকরা বলেন, টেলিভিশনের প্রচারণাও খাবার গ্রহণে বেশ প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া বন্ধুর চাপে ও ফ্যাশনের প্রতি আকর্ষণও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
গবেষণা অনুযায়ী, অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ পানীয়র কারণে মানুষের ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ ও ক্যানসার হতে পারে। এসব রোগই অনেকসময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অন্যতম গবেষক অনুপ মিশ্রা বলেন, অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ পানীয় পানে শরীরে চর্বি জমে যে কারণে শরীর বিপাক পক্রিয়ায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে যকৃত, অগ্নাশয়সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। ভারতীয়দের ওপর অতিরিক্ত চিনিসমৃদ্ধ পানীয় পানের ক্ষতি পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের চেয়ে বেশি হবে। কারণ শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ভারতীয়দের শরীরে চর্বির পরিমাণ ও রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি।