কলকাতার ঈদবাজারে মাজমুয়া, শামামা, আফ্রাহিমের জয়জয়কার
ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় কলকাতার সব বয়সী মানুষ ভিড় করেছেন বিপণিবিতানগুলোতে। নতুন পোশাক-আশাক, রকমারি খাবার-দাবারসহ নানা সামগ্রী কিনতে এখন কলকাতার দোকানে দোকানে উপচে পড়া ভিড়।
অন্যান্য সামগ্রীর পাশাপাশি এখন লাইন লেগেছে কলকাতার আতরের দোকানগুলোতেও। মাজমুয়া, শামামা, আফ্রাহিম, মুসকাম্ভারের মতো নামীদামি আতরের কদর এখন তুঙ্গে। ঈদ উপলক্ষে আতরের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় সামাল দিতে এখন হিমশিম অবস্থা বিক্রেতাদের।
কলকাতার নাখোদা মসজিদের কাছেই রয়েছে শহরের মধ্যে অন্যতম আতরের সম্ভার। এখানকার ছোট-বড় আতরের দোকানে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে মানুষের ভিড়। ঈদ সামনে রেখে এখানকার নামীদামি আতরের দোকান ছাড়াও ফুটপাতে বসেছে অস্থায়ী হরেক সাইজের আতরের দোকান।
স্থানীয় দোকানদার ফাইমুদ্দিন জানান, রমজানের ঈদের সময়ই আতর বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। এবারও আতরের বিক্রি হচ্ছে ঈদ সামনে রেখেই।
এবারের ঈদে খাঁটি ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করা আতরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আতরের দোকানি ফাইমুদ্দিন বললেন, বেল ফুল, জুঁই ফুল, রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধি ফুল থেকে তৈরি আতরের খোঁজই এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি করছেন ক্রেতারা। কারণ হিসেবে ফাইমুদ্দিন আরো বলেন, এ ধরনের আতরে এক ফোঁটাও অ্যালকোহল থাকে না। প্রথমে ফুলের নির্যাস থেকে বের করা হয় মূল রস। তার পর সেই রস পরিশোধন করে চন্দনের ওপর বসিয়ে পরে চন্দন তেলে বসিয়েই এই আতর তৈরি করা হয়, যা একেবারেই নন-অ্যালকোহলিক আতর। সাধারণ পারফিউমের সঙ্গে আতরের পার্থক্য এখানেই। তাই ঈদ সামনে রেখে এই আতরের চাহিদা এত বেশি।
এ ধরনের সুগন্ধি আতরের মাত্র দুই গ্রামের দাম ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া রয়েছে হালকা গন্ধের বিভিন্ন আতরও। এ ধরনের হালকা গন্ধের আতরের চাহিদা রয়েছে মূলত অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে।
পাশাপাশি আসল আতরের সঙ্গে ইউরোপিয়ান পারফিউম ব্লেন্ড করে দেওয়া ব্লেন্ডেড আতরের চাহিদাও রয়েছে। রজনীগন্ধা, জুঁই, বেল ফুল বা অন্যান্য সুগন্ধি ফুলের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হওয়া ব্লেন্ডিং আতরেরও চাহিদা এবার যথেষ্ট। মূলত ১৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বয়সীদের মধ্যে এ ধরনের ব্লেন্ডেড আতরের চাহিদা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ঈদে কলকাতার আতর বাজারে হরেক সুগন্ধির ছড়াছড়ি।
এ ছাড়া কলকাতার অন্যতম এই আতর বাজারে পাওয়া যায় মৃগনাভি দিয়ে তৈরি আতরও। মূলত হরিণের নাভির সুগন্ধ থেকেই এ ধরনের আতর তৈরি হয়ে থাকে বলে জানালেন স্থানীয় আতর ব্যবসায়ীরা। তবে দুর্মূল্য সেই খাঁটি মৃগনাভি আতর পাওয়া এখন মোটামুটি দুঃসাধ্যের। সে কারণে বাজারে পাওয়া যায় নকল মৃগনাভির আতর।
ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, ততই কলকাতার আতর বাজারে রকমারি আতরের চাহিদা বাড়ছে। শুধু কলকাতার নয়, দূরদূরান্ত, এমনকি বাংলাদেশ কিংবা বিদেশ থেকেও বহু ক্রেতা এখন কলকাতার এই আতর বাজারে এসে প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছেন। হাতের ওপর আতর ঘষে চলছে সুগন্ধি পরখের কাজ। ফলে কলকাতা নাখোদা মসজিদের পাশের আতর বাজার এলাকা এখন দিন-রাত সুগন্ধে ম-ম করছে। সুদৃশ্য সব কাচের শিশিতে নানা রং-বেরঙের সুগন্ধি আতরের পসরায় আরো জাগিয়ে তুলছে কলকাতার ঈদের আমেজকে।