কিশোরীটি হতে চেয়েছিল বিমানবালা, কিন্তু…

Looks like you've blocked notifications!
পুলিশ সদস্যরা উত্তর প্রদেশের যে শ্যামল গ্রামটি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন, সেখানেই রক্তাক্ত হয় স্বপ্নচারী এক কিশোরী। ছবি : এনডিটিভি

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পূর্ব দিককার শহর বাল্লিয়া। সেই শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম বাজাহা। সেখানকার একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে বসে চোখের পানি সামলে নেহা দুবি তাঁর ১৭ বছর বয়সী ছোট মেয়ের একটা ইংরেজি ব্যাকরণ বই দেখাচ্ছিলেন। এই বইটিই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ত দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া রাগিণী নামের কিশোরীটি।

কয়েক মাস ধরে বাজাহা গ্রামে উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছিল কিশোরীটি, যেটি  চরম রূপ নেয় গত মঙ্গলবার সকালে। ওই দিন পাঁচ কিশোর তাকে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে, যাদের মূল হোতা গ্রামপ্রধানের ছেলে।

দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ শেষে বড় কোনো শহরে যেতে চেয়েছিল রাগিণী। হতে চেয়েছিল বিমানবালা। এ জন্যই সে ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখার ওপর খুব গুরুত্ব দিত। তার এমন ইচ্ছায় সায় ছিল পরিবারেরও।

রাগিণীর পরিবারের ভাষ্য, গ্রামপ্রধান কৃপা শঙ্কর তিওয়ারি প্রতাপশালী লোক। তাই তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পুলিশের কাছে যেতে সাহস পায়নি তারা। উল্টো তারা গ্রামপ্রধানের কাছেই ছেলে ও তার বন্ধুদের সীমা ছাড়ানোর বিচার চাইতে গিয়েছিল; কিন্তু বিচার আর হয়নি।

ঘটনার পর থেকেই গ্রামছাড়া শঙ্কর। কিশোরী হত্যা মামলায় প্রধান সন্দেহভাজন তাঁর ছেলে প্রিন্স তিওয়ারিসহ তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর দুজনকে ধরতে চলছে অভিযান। তাদের সবাই পরস্পরের বন্ধু।

‘রক্ষা (রাখি) বন্ধনের দিন সে যখন আবার উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছিল, তখন আমরা শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলাম। গ্রামপ্রধান হাতজোড় করে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করেছিল’, বলেন নেহা দুবি।

আক্ষেপ আরো আছে নেহার। বিচার পাওয়ার বদলে তাঁদের কপালে আঁকা হচ্ছে চরিত্র হননের কলঙ্কতিলক।

উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন দেওয়া-নেওয়ার ঝামেলার বলি হয়েছে রাগিণী। যদিও এর কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করছে মেয়েটির পরিবার।

রাগিণীর বাবা জিতেন্দ্র কুমার দুবি বলেন, ‘পুলিশ কেন এমন করছে, তা বলতে পারব না। সম্ভবত তারা প্রকৃত অপরাধ আড়াল করতে চাইছে। আমি আসলেই এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

রাজ্য পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা আইন ফিরিয়ে আনব। এটা গ্রামের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা ভয়াবহ অপরাধ এবং আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’