আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীরা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে : সু চির দপ্তর
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে বলে দাবি করেছে স্টেট কাউন্সেলর (রাষ্ট্রীয় পরামর্শক) অং সান সু চির দপ্তর।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, সু চির দপ্তরের এমন বক্তব্য অসম্মানজনক।
গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা অব্যাহত আছে। গত দুদিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৪ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতার মুখে মংডু ও বুথিডং শহর থেকে বেসরকারি সংস্থার বেশ কিছু কর্মীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন সময় সু চির দপ্তর থেকে নতুন বিবৃতি দেওয়া হলো।
স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তর বলছে, রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে সন্ত্রাসীদের হামলায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সদস্যরা জড়িত হয়েছিলেন।
সু চির ওই অফিস থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বিতরণ করা বিস্কুটের ছবি পোস্ট করে সামাজিক মাধ্যমে। এ ব্যাপারে বলা হয়, গত ৩০ জুলাই অভিযান চালিয়ে যে ক্যাম্পে এ বিস্কুট পাওয়া যায়, সেখানে সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছিল।
মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল। রাখাইন রাজ্যে সু চির সরকার সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকি রোহিঙ্গাদেরও নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
বুথিডান শহরের স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কাজে সাহায্য করছে’—এমন বিবৃতি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর অন্তত ১০০ ত্রাণকর্মী স্পিডবোটে করে অন্যত্র চলে গেছে।
মানবাধিকতার সংগঠন ফরটিফাই রাইটের নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ত্রাণকর্মীদের বিরুদ্ধে সু চির দপ্তরের বিবৃতি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভয়াবহ।
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে। এরপর আবার একই ধরনের হামলার তথ্য দিল মিয়ানমার সরকার।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতার শিকার হয়ে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।