কেন সু চির নোবেল পদক কেড়ে নেওয়া হবে না?
অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পদক পেয়েছিলেন অং সান সু চি। দীর্ঘ কারাবাস শেষে তিনি এখন মুক্ত। তিনি বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অথচ এ সময়ে দেশটির আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে। প্রতিদিন সাগরে ও নদীতে ভাসছে রোহিঙ্গা শিশুদের লাশ। সু চি কিছু বলছেন না। এ ব্যাপারে সু চির কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেই।
এ যখন অবস্থা, তখন সু চির নোবেল পাওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, কেন সু চির নোবেল ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। বিশ্বের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভকারীরা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি সু চির নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানাচ্ছে।
সু চির পদক কেড়ে নেওয়া হবে কি না এ নিয়ে তর্ক উঠেছে। আদৌ কেড়ে নেওয়া হবে? কেড়ে নেওয়া কি সম্ভব? এসব নিয়েই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা সু চির পদক কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়েছে তার ছবি।
জাকার্তায় বিক্ষোভকারীদের একজন ফরিদা বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চলার সময় সারা বিশ্ব নীরব ভূমিকায় আছে।’
শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। তিনিও সমালোচনা করলেন রোহিঙ্গা নিয়ে সু চির ভূমিকার। টুইটারে মালালা লিখেছেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমি এই মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আসছি। আমি এখনো অপেক্ষা করছি নোবেল জয়ী সু চি একই কাজ করবেন। সারা বিশ্ব অপেক্ষা করছে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানরা অপেক্ষা করছে।’
১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সু চি। কিন্তু সামরিক জান্তা তা মেনে নেয়নি। এরপরই কারাবন্দি হতে হয় সু চিকে। ১৫ বছর টানা বন্দিজীবন কাটান তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বরাবরই নীরব ছিলেন সু চি। এ ব্যাপারে সামরিক জান্তার সঙ্গেই হেঁটেছেন তিনি। যারা মনে করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা অবৈধ।
সু চিই প্রথম নন, যার নোবেল নিয়ে বিতর্ক শুরু হলো। এর আগে মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নোবেল পদক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের নেতা শিমন পেরেস ও আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে নোবেল পেয়েছিলেন ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত। তবে নোবেল কমিটিতে থাকাকালে ক্রিস্টিয়ানসন নামে এক সদস্য তা মেনে নিতে পারেননি। তাঁর দৃষ্টিতে ইয়াসির আরাফাত ছিলেন একজন ‘সন্ত্রাসী।’
১৯৯১ সালে সু চিকে নোবেল দেওয়ার ওই কমিটিতে ছিলেন স্টলসেট। তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার কখনো ফেরত নেওয়া হয় না। কমিটি নোবেল জয়ীদের প্রতি কোনো নিন্দাজ্ঞাপনও করে না।’
স্টলসেট আরো জানান, এটা কিন্তু কোনো সাধুর নাম ঘোষণা না। তিনি বলেন, ‘যখন সিদ্ধান্ত হয়, যখন পদক দেওয়া হয়, তখনই কমিটির দায়িত্ব শেষ হয়।’