রাখাইনে সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতও
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম মিয়ানমার সফর করলেন নরেন্দ্র মোদি। এমন একসময়ে মোদির এই সফর, যখন রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে লাখো রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
আজ বুধবার বিকেলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রতিবেশী দেশের দুই নেতা। সেখানে মোদি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে চরমপন্থী সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা এবং নিরীহ জনগণের জীবন আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবেশী হিসেবে দুই রাষ্ট্রই নিরাপত্তা নিয়ে সমান উদ্বিগ্ন।’
সংবাদ সম্মেলনে মোদি মিয়ানমারের উন্নয়নে ভারতের আগ্রহের কথাও জানান।
অপরদিকে সু চি বলেন, সন্ত্রাস যাতে দেশে বা প্রতিবেশী দেশের মাটিতে শেকড় গাড়তে না পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে দুই রাষ্ট্রকেই। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ঐক্য বজায় রাখতে মিয়ানমার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সু চি আরো বলেন, ‘যৌথভাবে আমরা নিশ্চিত করব আমাদের দেশ, মাটি বা প্রতিবেশী কোনো দেশে যাতে সন্ত্রাসবাদ শেকড় গাড়তে না পারে।’
দুই দেশের যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে মিয়ানমার ও এর মিত্র দেশগুলোতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সু চি।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা সু চির সঙ্গে বৈঠকের আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট হি থিন কিয়াওয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মোদি। সেখানে মোদি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করে গড়ে তোলার বিষয়ে ভারতের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে, মিয়ানমারের ক্ষসতাসীন দলের নেতা সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের কারাগারে বন্দি ৪০ জন মিয়ানমারের নাগরিককেও শিগগিরই মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। এ ছাড়া ভারতে আসতে ইচ্ছুক মিয়ানমারের নাগরিকদের বিনামূল্যে ভিসা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুদিনের সফরে মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোতে পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট। পরে দুই নেতা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি টুইটে বলেন, ‘হি থিন কিয়াওয়ের সঙ্গে চমৎকার বৈঠক হয়েছে।’
দিল্লিভিত্তিক গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের প্রায় এক হাজার ৬৪৩ কিলোমিটারের সীমান্তপথ রয়েছে।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্য এই সীমান্তপথের সঙ্গে যুক্ত। কয়েকশ বছরের বাণিজ্য-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতাতেই এখনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করেন মিয়ানমারে।
সংঘাতপ্রবণ রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার জাতিসংঘের নিবন্ধিত শরণার্থী। ভারত এসব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আজকে সু চির বৈঠকে সে ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আভাস দিয়েছেন ভারতের কর্মকর্তারা।
নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর মিয়ানমার থেকে ১১ দিনে এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ও রয়টার্স। সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে গতকাল তিন হাজার ২৩১ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। আর মিয়ানমারের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পুরো মিয়ানমারেই মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে।