‘ধর্ষণে যতক্ষণ বাধা দিয়েছে, ততক্ষণই পিটিয়েছে সেনারা’

Looks like you've blocked notifications!
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চীনখালি গ্রামে চোখের সামনে মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখা আহসান। ছবি : আলজাজিরা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রায় চার লাখ (জাতিসংঘের দেওয়া সর্বশেষ হিসাব) রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশেই তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হওয়ার পর পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা থাকা, খাওয়া, পোশাক, অপুষ্টিসহ অসংখ্য সমস্যার মধ্যে করছে মানবেতর জীবনযাপন। তাঁদেরই একজন আহসান। ৩০ বছর বয়সী আহসান রাখাইনের চীনখালি গ্রামে নিজ বাড়িতে চোখের সামনে মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছেন। সেই নৃশংস ঘটনার বর্ণনাসহ তাঁদের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা জানিয়েছেন আলজাজিরার প্রতিবেদকের কাছে। সেই প্রতিবেদন পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।

‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে আমার কৃষিজমি ছিল। আমি চাষাবাদ করতাম, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতাম। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতাম।’
‘গত ২৫ আগস্ট সকালে প্রতিদিনের মতো পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাচ্ছিলাম। ওই সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এবং অতর্কিতভাবে গুলি করতে শুরু করে। তারা নির্বিচারভাবে আমাদের পরিবারের পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করে।’

‘আমি দেখলাম, পিঠে গুলি লেগে মা মাটিতে পড়ে আছে। তার পাশেই পড়ে ছিল মুখ ও শরীরের অসংখ্য ছুরিকাঘাত হওয়া আমার বোন। এই ভয়ংকর দৃশ্য আমাকে দেখতে হয়েছে। তাদের পাশে বসে একটু কাঁদব, সেই সুযোগটুকুও আমি পাইনি। কারণ সামরিক বাহিনীর গুলির হাত থেকে বাঁচতে আমাকে পালাতে হয়েছে।’

‘সামরিক সেনারা আমার বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বাধা দেয়। কিন্তু যতক্ষণ সে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, ততক্ষণ তাকে পিটিয়েছে সেনারা। তার পর থেকে ভয়ংকরভাবে মানসিকভাবে ভীত বোন আমার কোনো কথা বলে না। বোন একটু-আধটু চলাফেরা করতে পারত, তাকে আমি আর আমার ভাই বাংলাদেশ পর্যন্ত পুরো রাস্তা বহন করে নিয়ে আসছি।’

‘বাংলাদেশে আসার পথে আমাদের আরো অনেক ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে হয়েছে। অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। দেখেছি না খেতে পেয়ে শিশু-বৃদ্ধের কান্না। আমরা যখন বাংলাদেশের সীমানায় পৌঁছালাম, তখন দেখি হাজারের অধিক রোহিঙ্গা আমাদের মতো নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তখন আমরা একটা নৌকা দেখতে পেলাম, যেটা সবাইকে পারাপার করছে।’

‘বাংলাদেশে আমাদের জীবন খুবই অমানবিক, নির্মম। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই, পায়খানা করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি সব রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। আমরা বেঁচে আছি, কিন্তু এই বেঁচে থাকা খুবই দুর্বিষহ। এই বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’

‘আপনি যেমন মানুষ, তেমনি আমিও মানুষ। কিন্তু পার্থক্য হলো আপনি কোনো এক দেশের নাগরিক, কিন্তু আমরা কোনো দেশের নাগরিক নই।’

‘তাই বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ, আমাদের কোনো একটি দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেন। আপনারা যেভাবে বেঁচে আছেন, আমরাও সেভাবে বাঁচতে চাই।’