‘চলে যাও, নইলে সবাইকে মেরে ফেলব’

Looks like you've blocked notifications!

সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে হামলার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলছে হত্যা ও নির্যাতন। সেই নির্যাতনের মুখে প্রাণে বাঁচতে সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। অনেকেই আবার পালানোর সুযোগটাও পায়নি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর ছায়ায় বসে সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে মেনে নিতে হচ্ছে তাদের। আটকে পড়া এমন অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে জানিয়েছে বেঁচে থাকার আকুতি।

এ রকমই আটকে পড়া একজন রোহিঙ্গা মং মং। টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়ে আছি। কিছুদিন পর থেকেই আমাদের অনাহারে থাকতে হবে। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’

রয়টার্সের সঙ্গে কথা হয় আরেক রোহিঙ্গার। ভয়ে তিনি নাম প্রকাশ করেননি। তিনি জানান, তাঁদের গ্রামে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তারা বলে, ‘চলে যাও, নইলে সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাখাইনের সেক্রেটারি তিন মং সুই বলেন, রাখাইনে এমন কিছুই হচ্ছে না। সবাই নিরাপদেই আছে। একই কথা বলেছেন দেশটির জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র মোয়ো থু সেই। তিনি বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হবে বলে রয়টার্সকে আশ্বাস দেন।

রাখাইনের বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় অঞ্চলের প্রধান ক্যাটরিনা অ্যাডামসের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, সেখানে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, পানি ও বাসস্থান সংকটে রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের সহায়তা করা।

রাখাইনের রাথিডং অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ২১টি গ্রাম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৬টি গ্রাম এখন জনশূন্য। গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনাসদস্যরা। সেখান থেকে পালিয়েছে কমপক্ষে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা। বাকি পাঁচটি গ্রামে এখনো আটকে রয়েছে আট হাজার রোহিঙ্গা।

রয়টার্সকে মং মং বলেন, তাঁর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকির কথা পুলিশকে কমপক্ষে ৩০ বার জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। কাজটি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে জানায় পুলিশ।

মং মং আরো জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর রাখাইন গ্রামের এক পরিচিতের কাছ থেকে একটি ফোনকল পান তিনি। তাঁকে হুঁশিয়ার করে বলে দেওয়া হয়, ‘কালই পালাও, নইলে আমরা কাল আসব আর তোমাদের সব ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবো।’

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মং মং জানান, অভিযোগ করার পর তাঁদের জানানো হয়, মিয়ানমার সরকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের রাখাইনে থাকতে দিতে চায় না। তাঁরা গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে পারে। এতে রোহিঙ্গারা সম্মত হয় বলে জানান মং মং। তবে তাঁরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চান।