তিনি মাঝরাতে আমাকে বের করে দেন : মোনালি
বলিউডের অন্যতম ব্যস্ত সংগীতশিল্পী মোনালি ঠাকুর। অবশ্য এখন তিনি বলিউডের অন্যতম ব্যস্ত নায়িকাও বটে। একদিকে গান, অন্যদিকে অভিনয়। দুটোই সমানতালে সামলাচ্ছেন। ব্যস্ততার ফাঁকেই এনটিভি অনলাইনকে সময় দিলেন। আলাপচারিতায় জানালেন তাঁর নানা স্বপ্নের কথা।
প্রথমে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘আমার বাবা (শক্তি ঠাকুর) বহুবার বাংলাদেশে গিয়েছেন নানা শো-এর খাতিরে।’
বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদের কথাও বলতে ভুললেন না মোনালি। ইলিশের প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘আমার বাবা প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশ সংলগ্ন টাকিতে যেতেন ইলিশ আনতে। উফ...ইয়ামি তার স্বাদ। আজও ভোলা যায় না।’
এরপর কিছুটা সময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘শোনা যাচ্ছে মোনালি ঠাকুর নাকি গান-বাজনা ছেড়ে দিচ্ছেন?’
প্রশ্ন শুনেই রীতিমতো চমকে ওঠার মতো করে বললেন, ‘এ মা ! সেকি? কে বলল?’
বললাম, ‘অভিনয় করছেন তো, তাই গান-বাজনা ছেড়ে দিচ্ছেন নাকি?’
এবারে যেন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে উত্তর দিলেন, “ওহ, তাই বলুন! অভিনয় করছি বলে গান-বাজনা ছাড়তে যাব কেন? দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যেতে চাই। আমার বাবা শক্তি ঠাকুর সুগায়ক। একটি মিউজিক্যাল ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি আমি। গানই আমার জীবনে প্রধান ছিল। তাই গান ছাড়া তেমন কিছু নিয়ে কোনোদিনই ভাবিনি। অভিনয়ের অফারগুলো খুব সহজেই এসে গেল। আর অভিনয় করতে করতে দেখলাম মন্দ লাগছে না। এর আগে আমি ‘আলোকিত ইন্দু’ ধারাবাহিকে কাজ করেছি। তা ছাড়া ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ নামের একটি ছবিতেও কাজ করেছি।”
এবারে একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, ‘নায়িকা মোনালি ঠাকুরের ড্রিম হিরো কে?’
একমুহূর্ত না ভেবেই ঝটপট উত্তর দিলেন, ‘ঋষি কাপুর। আমি এত দিন ধরে মুম্বাইতে আছি, ওনার সঙ্গে দেখা হয়নি কোনো পার্টিতে। তবে একবার মুম্বাই এয়ারপোর্টে দূর থেকে ওনাকে দেখেছি। এত নার্ভাস ছিলাম যে কথাই বলতে পারিনি। উনি এখনো যা হ্যান্ডসাম আছেন, অসাধারণ। ওনার অভিনয়, নাচ আর পার্সোনালিটি যা, যেকোনো মেয়ের মন জয় করে নেবে। আমার তো আজও একটাই স্বপ্ন, এমন কোনো ছবি হোক যেখানে আমি ঋষিজির সঙ্গে কাজ করতে পারি।’
জানতে চাই নায়িকা হতে গিয়ে ডায়েট কন্ট্রোল কেমন করতে হয়েছে?
এবারে ফিক করে হেসে ফেললেন। তারপর বেশ সিরিয়াস হয়ে বললেন, ‘জানেন, চকলেট, আইসক্রিম থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। ভেজিটেবলের সঙ্গে নুন চিনি ছাড়া চিকেন স্যুপ দিনে পাঁচবার খেতে হয়েছে। সঙ্গে মাত্র তিন-চারটি মৌসুমি ফল। সেই সঙ্গে সারাদিনে দুই ঘণ্টা করে দুইবার জিমে ব্যায়াম। ২০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছি। এখন অবশ্য এতটা কড়াকড়ি ডায়েট কন্ট্রোল করি না। তবে একটা ডায়েট চার্ট মেনে চলি।’
এবারে গায়িকা মোনালি ঠাকুর নিয়ে প্রশ্ন করার অনুমতি চেয়ে নিয়ে বললাম, ‘আপনার বলিউডে আসা তো একটা রিয়্যালিটি শো’য়ের মধ্য দিয়ে?’
উত্তরে মোনালি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি জি টিভির গানের রিয়্যালিটি শো’য়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে আসি। তখন আমার বয়স মাত্র ১৯ বছর। দেখুন একজন শিল্পীকে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে স্ট্রাগল তো করতেই হয়। আমাকেও হয়েছে। প্রথম দিকে মুম্বাইয়ের ইয়ারি রোডে আমি একজন আত্মীয়র বাড়িতে থাকতাম। একদিন আমার গানের রিহার্সাল ছেড়ে রাত করে ঘরে ফেরায় উনি মাঝরাতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তবে ঈশ্বরে ভরসা থাকলে সব ব্যবস্থাই হয়ে যায়।’
বললাম, যারা যারা টাচ মি টাচ মি থেকে সাওয়ার লু একটা বিরাট জার্নি আপনার। কী বলবেন সেই সম্পর্কে?
উত্তরে আবার একগাল হেসে মোনালি বললেন, ‘জার্নি তো সবে শুরু। এখনো অনেক পথ চলা বাকি। মা-বাবার আশীর্বাদ এবং ঈশ্বরের অসীম কৃপায় এই কয় বছরেই আমি নানা ধরনের গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সব কম্পোজিশনই ভীষণ ভালো। বিশেষ করে লুটেরা ছবির সাওয়ার লু গানটা আমার বিশেষ প্রিয়। এতো সফট টিউন। আমি প্রায়ই গুনগুন করি।’
এবারে ফের কিছুটা সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন সুরকারের সঙ্গে কাজ করা আপনার কাছে এখনো স্বপ্ন?’
একবিন্দু না ভেবে বললেন, ‘এ আর রহমান স্যার। যেকোনো গায়ক-গায়িকার কাছেই এটা স্বপ্ন। আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকলে সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হবে আগামীতে।’
এবারে একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার অনুমতি চাইলাম মোনালির কাছে। অবশ্য উত্তরে জানিয়ে রাখলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো না লাগলে উত্তর দেবেন না। বললাম, ‘ফ্যাশন ডিজাইনার মেইয়্যাং চ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে গেল কেন?’
উত্তরে প্রথমেই জানিয়ে দিলেন, ‘প্লিজ এই বিষয়ে উত্তর দিতে আমার ভালো লাগে না। চ্যাং আমার ভালো বন্ধু ছিল। প্রথমদিকে মুম্বাইতে ও আমাকে ভীষণ ভালো সাপোর্ট করেছে। আমি কৃতজ্ঞ ওর কাছে। তবে বর্তমানে যে কারণেই হোক সম্পর্কটা নেই। তাই ওই নিয়ে আমি কথাও বলতে চাই না।’
বললাম, ‘কলকাতাকে মিস করেন না?’
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, ‘করি তো। বিশেষ করে মায়ের হাতের রান্না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, দিদি জামাইবাবুর সঙ্গে ঘোরাঘুরি। তাই তো সময় পেলেই কলকাতায় ছুটে যাই।’
প্রশ্ন করি, ‘বাংলাদেশে গেলে শ্রোতাদের কোন তিনটি গান শোনাবেন?’
একটু ভেবে মোনালি উত্তর দেন, ‘লুটেরা ছবির সাওয়ার লু, রেস ছবির খোয়াব দেখে ঝুটে মুটে আর অপরাজিতা তুমির শ্যাডো টেলস।’
সময় প্রায় শেষের দিকে। চটজলদি ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন করার অনুমতি চেয়ে নিলাম।
আপনার প্রিয় রঙ?
মোনালি : কালো সাদা কম্বিনেশন, ডিপ ব্রাউন
আপনার কাছে সবচেয়ে সুন্দর?
মোনালি : মায়ের ভালোবাসা।
শপিং করলে কী কেনেন বেশি?
মোনালি : ওয়েস্টার্ন ড্রেস।
বন্ধুদের সঙ্গে আউটিংয়ে কী পরতে ভালোবাসেন?
মোনালি : জিনস ও টি-শার্ট।
অবসরে কী করেন?
মোনালি : সিনেমা দেখি, জিমে যাই বা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যাই।
ভালোবাসেন কী?
মোনালি : গলায় ভালো সুর তুলতে, গান গাইতে।
গায়িকা না হলে কী হতেন?
মোনালি : বিয়ে করে সংসার করতাম।
অপছন্দ কী?
মোনালি : ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন করে বিরক্ত করা।
আপনার সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণটা কী?
মোনালি : আমার চোখ ও হাসি।
সবশেষে বাংলাদেশের শ্রোতাদের পক্ষ থেকে মোনালিকে ধন্যবাদ জানাতেই মোনালি বললেন, ‘বাবার কাছে অনেক শুনেছি বাংলাদেশের কথা। বাবার অনেক গান ও ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল বাংলাদেশে। আমি নিজে বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করার পাশাপাশি সেখানকার ছবিতে গানও গাইতে চাই।’