‘থ্যাংক ইউ, বাডি’

Looks like you've blocked notifications!
শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে (আইআইএম) পৌঁছার পর করমর্দন করার সময় এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম। ছবিটি গতকাল ২৭ জুলাই-২০১৫, সোমবার তোলা। ছবি : টুইটার থেকে

অগ্নি, পৃথ্বী, আকাশ, ত্রিশূল ও নাগের মতো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছেন যে ব্যক্তি তিনি স্বাভাবিকভাবেই কঠিন মনের অধিকারী হবেন—এটিই সাধারণ মানুষের ধারণা। কিন্তু না, অপর আট-দশটা মানুষের মতো তিনিও অন্যের কষ্টে কষ্ট পেতেন, অন্যের দুঃখে দুখী হতেন। তারই প্রমাণ রেখে গেলেন মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও।

হ্যাঁ বলছি, সদ্যপ্রয়াত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের কথা। গতকাল সোমবার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ‘জনগণের রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে পরিচিত মানুষটিকে পুরো রাস্তায় গাড়িতে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিয়ে শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে (আইআইএম) নিয়ে যান এক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল কালাম বলেন, ‘থ্যাংক ইউ, বাডি (ধন্যবাদ, বন্ধু )।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, আবদুল কালামের সহযোগী সৃজন পাল সিং ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার দিয়েছেন। পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ৮৩ বছর বয়সী কালাম তাঁদের গাড়িবহরের সামনের খোলা জিপে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিলংয়ে আইআইএমে ‘বাসযোগ্য পৃথিবী’ বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় এই কর্মকর্তা তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যান।

সৃজন পাল সিং লিখেছেন, ‘এক ঘণ্টার রাস্তা যাওয়ার পর কালাম বলেন, ‘কেন সে দাঁড়িয়ে আছে ? সে তো ক্লান্ত হয়ে যাবে। এটি এক ধরনের শাস্তি। তুমি কি ওকে তারহীন বার্তার মাধ্যমে জানাতে পার যে সে বসতে পারে?’ আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, বলি অধিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই সম্ভবত তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কোনো সংকেতের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তাকে বসতে বলা যায় কি না—এমন প্রশ্ন বাকি দেড় ঘণ্টায় কয়েকবার করেন আবদুল কালাম। আইআইএম ভবনে পৌঁছার পর এক সহযোগী ওই কর্মকর্তাকে খুঁজে এনে কালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

সিং লিখেছেন, ‘ড. কালাম তাঁকে ধন্যবাদ জানান। তাঁর সঙ্গে করমর্দন করেন এবং বলেন, ধন্যবাদ, ভাই (থ্যাংক ইউ, বাডি)। তুমি কি ক্লান্ত? তুমি কি কিছু খাবে? আমি দুঃখিত তোমাকে আমার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।’

এর কিছুক্ষণ পরই আইআইএমে বক্তব্য দেওয়ার সময় পড়ে যান এ পি জে আবদুল কালাম। সেখান থেকে শিলংয়ের বেথানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাত ৯টার দিকে মারা যান আবদুল কালাম।

শিলংয়ের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এম খারক্রাং বলেন, গতকাল বিকেলে গৌহাটি থেকে শিলং যাওয়ার পথে সতর্ক অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি বিশেষ অভিযান বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে (এসওটি) ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যখন সাবেক রাষ্ট্রপতি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠান তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।

আবদুল কালামের মরদেহ আজ মঙ্গলবার দুপুরে গৌহাটি থেকে নয়াদিল্লিতে নেওয়া হয়েছে। জন্মস্থান তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে তাঁকে কবর দেওয়া হবে।