‘অবর্ণনীয় নির্মমতা’ বয়ে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

Looks like you've blocked notifications!

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত অক্টোবরে নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর ‘জাতিগত নিধনের’ জের ধরে দেশটির সেনা সদস্যদের হাতে হত্যা-নির্যাতন-ধর্ষণের মতো অবর্ণনীয় নির্মমতার শিকার হয়েছেন সেখানকার মুসলিম রোহিঙ্গা নাগরিকরা।

পরিবারের সদস্যদের ওপর নেমে আসা নৃশংস দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা, বাস্তুচ্যুত হয়ে বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে শুধু জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মতো দুঃসহ অভিজ্ঞতা প্রত্যেক রোহিঙ্গার জীবনেই রয়েছে। এই ঘটনা ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশহীন এই গোষ্ঠীর’ মনোজগতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মানসিকভাবে আঘাত পাওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে কাউন্সেলিংয়ের মধ্য দিয়ে ভীতিহীন স্বাভাবিক জীবনবোধে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন একদল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাদের একজন মাহমুদা। এই মনোবিদ শরণার্থী ক্যাম্পের একটি কেন্দ্রে বসে আতঙ্কিত রোহিঙ্গাদের তালিকা করছিলেন।

মাহমুদার কাছে মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিনিধি জানতে চান, তাঁর রোগীরা কী ধরনের মানসিক আঘাত নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা নারীরা স্বামী-সন্তানকে হারানোর মতো দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক (ইউএনএইচসিআর) হাইকমিশনের এই কর্মী যখন রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে শুরু করেন তা শোনা খুবই কষ্টকর ছিল।

মনোবিদ মাহমুদা এক রোহিঙ্গা নারীর গল্প বলেন, যিনি চোখের সামনে সেনাবাহিনীর হাতে তাঁর স্বামীকে জবাই হওয়ার দৃশ্য দেখেছেন। ২০ বছর বয়সী ওই নারী গর্ভবতী ছিলেন। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি তাঁর এক বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় তাঁকেও হারিয়ে ফেলেন।

প্রাণ নিয়ে কোনোমতে বাংলাদেশে আসার পর ওই নারী তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস! তাঁর সেই সন্তানটি মাত্র আট থেকে ১০ দিন বেঁচে ছিল।

‘বর্তমানে ওই নারীর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। এমন কেউ নেই যে তাঁর দেখাশোনা করবেন। তাঁকে যেকোনো বিষয়েই জিজ্ঞাসা করলে তিনি শুধু হাসছেন,’ বলেন মাহমুদা।

মনোবিদ মাহমুদার অধীনে আরো অনেক রোহিঙ্গা মা আছেন যাঁরা সেনা অভিযানে তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন। এমনকি বাবা-মা হারানো অনেক শিশুও আছে।

মাহমুদা আরো বলেন, এমন কিছু শিশু আছে যাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। এদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে তাদের বাবা-মাকে সেনাবাহিনীর হাতে মরতে দেখেছে, আগুনে পুড়তে দেখেছে।

‘আমরা তাদের প্রাথমিক কিছু সেবা দিচ্ছি, গভীরভাবে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে না’- বলেন এই মনোবিদ।

রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত আগস্ট থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য মিয়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও দেশটির সরকার ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব ভূমিকা পালনের জন্য সমালোচিত হয়েছেন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চিও।