পাকিস্তানেই তৈরি হয়েছিল মুম্বাই হামলার ছক!

Looks like you've blocked notifications!
মুম্বাই হামলার পর জ্বলছে তাজ হোটেল। ছবি : রয়টার্স
 

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরে ভারতের মুম্বাইয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছক তৈরি করা হয়েছিল পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডনের এক নিবন্ধে এমন কথাই বলেছেন দেশটির ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির সাবেক মহাপরিচালক তারিক খোসা।

urgentPhoto

নিবন্ধে পাকিস্তানের সাবেক এ গোয়েন্দা প্রধান নিজেকে মুম্বাই হামলাবিষয়ে পাকিস্তানের করা তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, মুম্বাইয়ে হামলার পুরো পরিকল্পনা ও তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল পাকিস্তানে বসে।

এ জন্য পাকিস্তানকে সত্যের মুখোমুখি হয়ে ভুল স্বীকার করে নেওয়া উচিত।

দ্য ডন পত্রিকার প্রবন্ধে খোসার দাবি, কীভাবে ভারতে হামলা চালানো হবে, তার পরিকল্পনা ও কার্যকর করা, এসবই উঠে এসেছিল ২০০৯ সালে করা তাঁর তদন্তে। নিবন্ধে তিনি আরো জানিয়েছেন, মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত আজমল কাসাব পাকিস্তানি নাগরিক। ইন্টারনেট ফোনের  তথ্য থেকে জানা গেছে, হামলা পরিচালনার নিয়ন্ত্রণকক্ষ ছিল করাচিরই একটি বাড়ি। এ ছাড়া হামলায় জড়িত কাসাব ও অন্য জঙ্গিদের লস্কর-ই তৈয়বা সিন্ধের থাট্টার কাছে ট্রেনিং দিয়েছিল, সেই প্রমাণও পাওয়া গেছে তদন্তে।

খোসা দাবি করেছেন, ২০০৯ সালে করা সেই তদন্তে মুম্বাই হামলা বিষয়ে প্রায় সবই জানা হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের, যদিও তা প্রকাশ করা হয়নি। তিনি আরো জানান, সিন্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বিস্ফোরকের যে খোল পাওয়া গেছে তার সঙ্গে মুম্বাইয়ে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের খোলের মিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া করাচি থেকে মুম্বাইয়ে আসা ট্রেলার ও ডিঙ্গি নৌকাও রাখা ছিল করাচি বন্দরে। করাচি থেকে জঙ্গিরা যে ট্রেলারে রওনা দিয়েছিল তা রং করে বন্দরেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।আর যে ডিঙিতে চেপে তারা তীরে পৌঁছায় সেই ডিঙিটির ইঞ্জিনের নম্বর থেকে জানা যায় সেটি জাপান থেকে কেনা হয়েছে। নানা হাত বদলে তা লাহোরে পৌঁছায়। অর্থ লেনদেনের সূত্র ধরে কীভাবে তা জঙ্গিদের হাতে পৌঁছেছে তাও জানা গেছে বলে লিখেছেন তারিক।

ভয়ঙ্কর এই হামলার ঘটনা যে পাকিস্তানে বসেই ঘটানো হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে তারিক লিখেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই পাকিস্তানের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’ এই তদন্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে ভুল তথ্য আদান-প্রদানের কথাও জানিয়েছেন তারিক। এমনকি, পাকিস্তানের কাছে থাকা চিহ্নিত জঙ্গি লাকভির কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে এফআইএসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কীভাবে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাও জানিয়েছেন তারিক।

নিবন্ধে তারিক নিজের দেশ পাকিস্তানের পাশাপাশি কাঠগড়ায় তুলেছেন ভারতকেও। তিনি লিখেছেন, ভারতের আলমারিতে যে অনেক পাকিস্তানি ও ষড়যন্ত্রের কঙ্কাল রয়েছে, এমন তথ্যপ্রমাণ পাকিস্তানের কাছেও রয়েছে। বেলুচিস্তান, করাচির নানা হামলায় যে ভারতও জড়িত আছে তার প্রমাণ পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের দেওয়ার আগেই ভারতের প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধানদের তা স্বীকার করে নেওয়া উচিত বলে মত প্রাক্তন পাকিস্তান গোয়েন্দাপ্রধানের । এরপরই তাঁর প্রস্তাব, এই পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তান দুই পক্ষই তাদের ত্রুটি স্বীকার করুক এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই দ্বিপক্ষীয় সমস্যা মিটিয়ে নিতে পারে।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হতে চলেছে। সম্প্রতি রাশিয়ার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নওয়াজ শরিফ ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সন্ত্রাস দমনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদ্বয়ের বৈঠকের কথাও আছে। সেই বৈঠকে কী হয় সেটাও এখন দেখার বিষয়। একইসঙ্গে তারিক মত প্রকাশ করেছেন, দুই দেশের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-আমলাদেরই বৈঠকে বসে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল না তুলে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা উচিত।