কারাগারেই বিয়ে করলেন ব্রিটেনের হিংস্রতম আসামি

Looks like you've blocked notifications!
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে হিংস্র কারাবন্দি চার্লস ব্রনসন ও তাঁর স্ত্রী পলা উইলিয়ামসন। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল। কনে এসেছেন নীলচে রুপালি রঙের মার্সিডিজ গাড়িতে চেপে। পরনে তাঁর  চমৎকার দুধসাদা গাউন। সেজেছেন যত্ন করে। সেজেছে কনেকে বহন করে আনা গাড়িটিও। সাদা ফিতে দিয়ে সাজানো গাড়ির পেছনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘জাস্ট ম্যারিড’ বোর্ড।

বর পরেছেন নতুন স্যুট। তিনিও প্রস্তুত বিয়ের জন্য।

কিন্তু এ কী? দুজনের মাঝে যে লোহার দরজা!

হবেই না কেন? বিয়েটা যে স্বয়ং যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে হিংস্র কারাবন্দি চার্লস ব্রনসনের। আর সেটা অনুষ্ঠিতও হয়েছে কারাগারের ভেতরে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ৬৪ বছর বয়সী ব্রনসন। তাঁর ৩৭ বছর বয়সী স্ত্রী পলা উইলিয়ামসন পেশায় একজন অভিনেত্রী।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ব্রিটেনের পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের ওয়েকফিল্ড এইচএম কারাগারে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সে সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাত্র পাঁচজন। 

দি ইনডিপেনডেন্ট ও দ্য মিররের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এই বিয়ের অনুমতি পেতে দীর্ঘ সময় যুক্তি-তর্ক হয়েছে ব্রনসনের অনুসারী ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে। অনেক প্রতীক্ষার পর বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পরই পরিকল্পনা সাজান চার্লস ব্রনসনের দীর্ঘদিনের সমর্থক এন্ড্রু পারকিন। 

বিয়ের জন্য গতকাল দুপুরে কারাগারের দর্শনার্থী কেন্দ্রে পৌঁছেন পলা ও তাঁর সঙ্গীরা। এরপর নির্দিষ্ট কাগজপত্রে স্বাক্ষরের পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ভেতরে। সেখানেই হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। নিরাপত্তার কারণে যেখানে পৌঁছাতে পারেনি কোনো ফটোসাংবাদিকের ক্যামেরা। তবে পলার কারাগারে পৌঁছানো, গাড়ি থেকে নামা, চার্লস ব্রনসনের জন্য নিয়ে যাওয়া স্যুটের ব্যাগ সবই ধরা পড়েছে গণমাধ্যমের ক্যামেরায়। 

বিয়ের পর কেমন সময় কেটেছে নবদম্পতির?

এই প্রশ্নের জবাবে পলা জানান, দুই ঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন তাঁরা। তবে সেই সময়ও দুজনের মাঝে ছিল লোহার দরজা। কেবল একটু ছুঁয়ে দেখার, হাত ধরার আর চুমু খাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন দুজনে। এরপর বেরিয়ে এসে একটি তিন তারকা হোটেলে বন্ধুদের নিয়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করেন পলা। এমনকি তিনি জানান, ব্রনসন তাঁকে ছাড়াই হানিমুনে যেতে বলেছেন পলাকে। দুই ঘণ্টার আলাপনে ভবিষ্যতে বাচ্চা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা। তবে ব্রনসন কারাগারে থাকা অবস্থায় তো আর তা সম্ভব না। তাই এখন পলার অপেক্ষা ব্রনসনের মুক্ত হওয়ার। তাহলেই পূর্ণ হবে তাঁর সব স্বপ্ন।

পলার আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে আর মাত্র চার বছর পর কারাগার থেকে বের হবেন চার্লস ব্রনসন। তবে সে সম্ভবনা কতটুকু তা বলাই বাহুল্য।

কারণ গত প্রায় চার দশক ধরে ব্রিটেনের কারাগারগুলোর স্থায়ী বাসিন্দা এই বন্দি। এই পুরো সময়ে অন্তত ২০ জন কারারক্ষীর ওপর হামলা চালিয়েছেন তিনি। করেছেন সহবন্দিদের সঙ্গে মারামারি। ফলে প্রায় ১২০ বার কারাগার বদলাতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের একটা বড় অংশই তাঁকে কাটাতে হয়েছে নির্জন কারাগারে।

এটি ব্রনসনের তৃতীয় বিয়ে। কারাজীবন নিয়ে ব্রনসনের লেখা একটি বই পড়ে তাঁর প্রতি আগ্রহী হন পলা। চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগের একপর্যায়ে দুজন দুজনার প্রেমে পড়েন এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রনসন দ্বিতীয়বার যখন বিয়ে করেছিলেন সে সময়ও তিনি কারাগারেই ছিলেন। চার বছরের মাথায় সেখানে বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ব্রনসনের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।