মায়ের সঙ্গে কারাগারে শিশুরাও

Looks like you've blocked notifications!

‘কাল রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম, আমাকে কেউ একজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর তুমি তাদের সাথে লড়াই করে আমাকে বাঁচালে।’

কারাগারের এক পাহারাদারের বেল্ট ধরে টানতে টানতে এসব কথা বলছিলো ৯ বছর বয়সী জাকিরুল্লাহ। জবাবে ওই পাহারাদার বলেন, ‘ভালোই দেখেছো।’

এই জাকিরুল্লাহ বাস করছে আফগানস্থানের জালালাবাদের একটি কারাগারে। শুধু শারিরীকভাবেই নয়, জাকিরুল্লার দৃষ্টিসীমাও বন্দি হয়ে গেছে কারাগারের চার দেয়ালের ভিতরে। অবশ্য নিজের কোনো অপরাধের জন্য নয়, সে কারাগারে আছে তার মায়ের অপরাধের জন্য। আর শুধু জাকিরুল্লাহ নয়,তার মতো আর ৪৩ জন শিশুর বাস এই কারাগারটিতে। এদের মধ্যে ২৫ জনেরই স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে।

জাকিরুল্লাহর সমস্যাটিকে ভয়াবহ বলা যায়। কারণ সে এরইমধ্যে তার মায়ের সঙ্গে কারাগারে এক বছর কাটিয়েছে। মায়ের ১৬ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তার বয়স ১৮ পার হবে।

সবমিলিয়ে আফগানিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে মায়েদের সঙ্গে বন্দিজীবন কাটাচ্ছে তিন শতাধিক শিশু।

সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, এই সব শিশুদের মায়েরা এমন সব অপরাধের জন্য জেল খাটছেন যেগুলোকে অন্য কোনো দেশে আদতেও অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয় না। যেমন-স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার অথবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার মতো কাজে সম্মতি না দেওয়া।

এ বিষয়ে ইউনিসেফের যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান দেনিসে শেফার্ড জনসন বলেন, ‘অনেক নারীই এখানে অনৈতিক কাজের অভিযোগে আছেন। যেমন-স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়া বা ঘরোয়া ঝগড়া ঝাঁটি।’

কারাগারে ছাড়াও এসব শিশুদের অনাথ আশ্রমে রাখা যায়। ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশূদের জন্য চারটি অনাথ আশ্রম থাকলেও সেগুলো এরইমধ্যে পরিপূর্ণ। ফলে নতুন শিশুদের জন্য এখানে আর কোনো জায়গা নেই। অন্যদিকে নানা কারণে আফগানস্থানের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা শিশুদের এসব অনাথাশ্রমে পাঠাতেও চান না।

শিশুগুলোর জন্যে একটি অনাথাশ্রম করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা উইমেন ফর আফগান উইমেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর নাজিয়া নাসিম। তিনি বলেন, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মায়েদের সঙ্গে শিশুরা জেল খাটছেন। এছাড়া অনেক কিশোর অপরাধীও রয়েছে। এটি বর্তমানে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আফগানিওস্থানের অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে অনেক কথা হলেও এই সমস্যাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো হৈচৈ হয়নি।

কিশোর অপরাধীদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এইসব শিশুদের প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা নেটওয়ার্কের পরিচালক বাশির আহমেদ বাশারাত বলেন, ‘এখানে আরও সহায়তা কেন্দ্রের খুবই প্রয়োজন। একটা অনাথাশ্রম হলে তাদের জন্যে খুব ভালো হয়। তারা যেহেতু অপরাধীদের সঙ্গে বড় হচ্ছে ফলে কিভাবে অপরাধী হতে হয় সেটা সহজেই শিখবে। তারা যখন বেরিয়ে আসবে তখন সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জন্মের কয়েক বছর পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে দেওয়া হয় শিশুদের। তবে স্কুলে যাওয়ার বয়সী এমনকি ৫ বছর বয়সীদেরও কারাগারে রাখা হয় না। কিন্তু আফগানস্থানে এটি হচ্ছে অহরহ। দেশটির অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে অনেক কথা হলেও এই সমস্যাটি দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছে।