অশ্রু ঝরানো সেই ছবি
এই কান্না আনন্দের। এই কান্না পুরো পরিবারকে নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে ভয়াল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার। এই কান্না হয়তো নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে আসারও।
গ্রিসের একটি সমুদ্রসৈকত থেকে তোলা এই ছবিটি পুরো বিশ্বের চোখ অশ্রুসজল করেছে। ছবিতে আছে একজন বাবার কান্না। আছে সন্তানকে পরম নির্ভরতায় বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের জন্য ছবিটি তোলেন আলোকচিত্রী ড্যানিয়েল এত্তের। এরপর যতবারই ছবিটি দেখছেন চোখ ভিজে আসছে তাঁর। শুধু তিনি কেন? গোটা পৃথিবীর যে প্রান্তের যে মানুষই ছবিটা দেখেছেন তাঁর ভেতরেই উঠছে হাহাকার। ভিজে যাচ্ছে চোখ।
ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রের তীরে একটি নৌকা থেকে নামার সময় ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে আর আরেকটি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন এক বাবা।
ছবির বাবার নাম লেইথ মাজিদ। সিরিয়ার দেইর এল জোর শহরের বাসিন্দা তিনি। সেখানে পরিবার নিয়ে আনন্দে বাস করতেন তিনি ও তাঁর স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী। সঙ্গে ছিল তিন ছেলে আর একমাত্র মেয়ে।
তাঁদের সেই শহরে হঠাৎ আক্রমণ করে আইএস যোদ্ধারা। আইএসের করা বোমা হামলার পর কোনোরকমে তুরস্ক হয়ে পালিয়ে গ্রিসে এসেছেন তিনি। তুরস্কের বোরডাম শহর থেকে এ পর্যন্ত আসতে তাঁদের পরিবারকে ব্যয় করতে হয়েছে আট হাজার ডলারেও বেশি অর্থ।
আলোকচিত্রী এত্তেরের বরাত দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউজ ডটকম ডটএইউ জানায়, কসের ডোডেকান দ্বীপে জীবত অবস্থায় আসতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। আর এই কান্না সেই আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এত্তের বলেন, ভয়ঙ্কর এক সফর শেষে সবেমাত্র তখন তীরে ভিড়েছে এই পরিবারটি। বেঁচে থাকার আনন্দেই আকুল তারা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘নৌকাটিতে ১২ জন মানুষ ছিল। অথচ এটা এত ছোট নৌকা ছিল যেটিতে সাকুল্যে তিন থেকে চারজন বসতে পারে।’
সেই নৌকায় চেপে দুই ঘণ্টার ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়েছেন অভিবাসীরা। পথে নৌকাটিতে ছিদ্র হয়ে পানিও উঠতে শুরু করে। সব মিলে যখন অভিযাত্রীরা তীরে পৌঁছেন তখন তাঁরা সবাই পানিতে ভেজা ছিলেন। তবে এত কিছুর পরও পুরোপুরি সুস্থভাবে পৌঁছানোতে ভীষণ আনন্দিত।
যে মুহূর্তে পুরো পরিবারটি একসাথে বেঁচে নতুন জীবনের দিকে এগোলো সেই মুহূর্তে তাদের চোখেমুখে ছিল পরিবারের জন্য ভালোবাসা। এভাবেই ওই সময়কার বর্ণনা দিলেন আলোকচিত্রী এত্তের।
পরিবারটির সাথে আবারও দেখা হয় এত্তেরের। তিনি জানান, কসের একটি শরণার্থী শিবিরে পরিবারটিকে আবারও খুঁজে পান তিনি। ভয়াবহ এই সফরের পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল ছোট্ট মেয়েটি।
এই পরিবারটি জার্মানিতে থিতু হতে চায় বলে এত্তেরকে জানিয়েছে তারা।
এত্তের বলেন, এর আগে কোনো ছবি তুলে এত আবেগাপ্লুত হননি তিনি। যতবারই ছবিটি দেখছেন ততবারই চোখে পানি চলে আসে তাঁর। এমনকি বিষয়টি পুরো বিশ্বও স্বীকার করবে। কারণ এরইমধ্যে হাজারোবার ছবিটি শেয়ার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।